রূপগঞ্জে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থানীয় জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা, গুলিবর্ষণ ঘটনার মূলহোতা এবং হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মাদক, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪০টির অধিক মামলার আসামি মোশা বাহিনীর প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া মোশা ও তার ০১ সহযোগীকে বিদেশী অস্ত্রসহ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; বিদেশী অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার।*
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার, জঙ্গি, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, ছিনতাইকারী, ধর্ষণ, অপহরণ, কিশোর গ্যাং ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৫ মে ২০২৩ তারিখ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থানীয় জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হয়।
উক্ত ঘটনায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা ও অন্য আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষিতে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায়, র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১৩ এর যৌথ অভিযানে গত রাতে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকার মোশা বাহিনীর প্রধান মূলহোতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ১। মোশারফ হোসেন ভূইয়া মোশা (৪৭), পিতাঃ হাজি মোতালেব ভূইয়া, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ২। দেলোয়ার হোসেন (৫২), পিতাঃ মৃত ছালেম, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ’দ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য ভোরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকা থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও তার পাশর্^বর্তী এলাকায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। উক্ত দলের সদস্য সংখ্যা ৭০-৮০ জন। মোশারফ এর নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত। অবৈধভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা দেশী ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। এছাড়াও এলাকার সাধারণ জনগণ মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীদের জন্য সবসময় আতঙ্কে থাকত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র, প্রতারণা ও মাদকসহ বিভিন্ন মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
গত ২৫ মে ২০২৩ তারিখ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নাওড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সৃষ্টি হলে মোশা বাহিনীর ৭০-৮০ জন সন্ত্রাসীরা এলাকায় শোডাউন, লোকজনকে মারধর এবং গুলিবর্ষণ করে। স্থানীয় লোকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বর্ণিত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেনকে গ্রেফতার করলে মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর চড়াও হয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৫/৬ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফকে ছিনিয়ে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত মোশারফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সে ‘মোশা বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে। তারা দীর্ঘদিন যাবত রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, হত্যা, হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অর্থের বিনিময়ে ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করত। বর্ণিত ঘটনার পর সে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিষ্ফোরক দ্রব্য, চাঁদাবাজি, মাদক ও প্রতারণাসহ ৪০টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং বিভিন্ন মেয়াদে সে একাধিকবার কারাভোগ করে।
গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার হোসেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে গ্রেফতারকৃত মোশারফ এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় বিভিন্ন অপরাধে ০৫টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করেছে। উক্ত ঘটনার পর সে মোশারফ এর সাথে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মো. আফজাল হোসেন আফজাল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.