রামেক হাসপাতালে নার্সের মৃত্যু নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। দিলারা খাতুন (৩০) সেই হাসপাতালেরই সিনিয়র স্টাফ নার্স। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার  নওডাঙা গ্রামের সবুজ আহমেদ মিঠুনের স্ত্রী।

গর্ভবতী হওয়ায় সন্তান প্রসবের জন্য গত বৃহস্পতিবার (১৩ই জুন) দিলারাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তিন দিনে তার শরীরে ১৬ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়।

আশ্চর্যজনক বিষয় যে, রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নার্সের স্বজনদেরকে জানায়,দিলারা খাতুন জন্ডিসে আক্রান্ত। এছাড়া তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি রক্তও দূষিত হয়েছে। এমনকি শনিবার থেকে তাদের রোগী দেখতে দেয়া হয়নি। সবশেষ  রবিবার (১৬ই  জুন) সন্ধ্যায় দিলারার মৃত্যুর কথা জানায়! ইতোমধ্যে তার জন্য স্বজনরা সরকারী এই হাসপাতালে তিন দিনে চিকিৎসায় প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন।

দিলারার স্বামী সবুজের অভিযোগ, তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে গত শনিবার দুপুরের আগেই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে রোববার সন্ধ্যায়।
স্বামী সবুজের দাবি, দিলারার মরদেহ থেকে পানি বের হচ্ছে। এ থেকে তারা ধারণা করছেন, শনিবারই দিলারার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা গোপন রেখেছে। এমনকি শনিবারে আমাদেরকে রোগীর কাছে যেতে দেয়নি।

স্বজনদের প্রশ্ন , ‘তাকে গর্ভপাতের জন্য ভর্তি করা। ধরা পড়ল জন্ডিস। কিডনিও নাকি নষ্ট। রক্তও লাগল ১৬ ব্যাগ। তিনদিনেই খরচও হলো লক্ষ টাকা। আবার রোগী দেখতে দেয়া হলোনা। পরে ঘোষণা দেয়া হলো ‘মৃত্যু’! কর্তৃপক্ষের এ কোন নাটকীয় কাণ্ড!’

এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় হাসপাতালে দিলারার সহকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদে একই হাসপাতালে কর্মরত ওই নার্সরা আইসিইউয়ের দরজার কাচ ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

তবে বিক্ষুব্ধ নার্সরা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। হাসপাতাল পরিচালক ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা কাজে ফেরেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে সুচিকিৎসা পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীর স্বজনরা। তাদের প্রশ্ন, তিনিও নার্স। চিকিৎসা ও দেখাশুনা করছিলেন তারাও ডাক্তার এবং নার্স। কাজেই নিজেদের ভেতরেই এরকম তুঘলকি কাণ্ড ঘটে গেলো। তাহলে আমরা কিভাবে সুচিকিৎসার আশা করব? আমরা কি রোগী ভর্তি করে শঙ্কামুক্ত থাকতে পারব?

হাসপাতাল ভাংচুরের সময় ঘটনাস্থলে গেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ভর্তি থাকা এক বৃদ্ধ এই রিপোর্টারকে বলেন, ‘ব্যাটা! ও ব্যাটা! একটু হারঘে (আমাদের) দিকে দেখিস ব্যাটা। দেখছিস ওরা ওরাই কেমন পিটাপিটি লাগ্যাছে? হারা (আমরা) সেবা পাব তো? আজ এক  লদিন (৯ দিন)  থেকে পড়ে আছি ব্যাটা। ওরা আসে একটু কি দেয় আর চল্যা  যায়। ‘

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার এক শিক্ষক বিটিসি নিউজকে বলেন, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। নিঃসন্দেহে এটি হাসপাতালের ব্যর্থতা। তাদের স্টাফের চিকিৎসার যদি এই দশা হয়। তাহলে বাকি জনসাধারণের কি ধরণের চিকিৎসা হতে পারে?

এদিকে এবিষয়ে কথা বলতে আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান এঘটনা বিষয়ে এখনই  গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে চান না বলে জানিয়েছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি  আমানুল্লাহ আমান।#

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.