রাবি-রুয়েটে ২ বছরে ১১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) দুই বছরে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ১১ শিক্ষার্থী। যেখানে রাবির ৯ জনসহ রুয়েটের রয়েছে ২ জন শিক্ষার্থী। শুধু রুয়েট বা রাবি নয় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
এর কারণ হিসেবে রুয়েট শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এদিকে রাবিতে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও সেবা নিয়ে রয়েছে হাজার প্রশ্ন।
তবে শিক্ষার্থীরা পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত জটিলতা, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, পরীক্ষা নিতে প্রশাসনের গড়িমসি, ফলাফল দিতে বিলম্ব, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ, ফলাফল আশানুরূপ না হওয়া, মানসিক চাপ, পারিবারিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সর্বশেষ গত ৮ জুন চিরকুটে ‘স্বেচ্ছায় মৃত্যু’ লিখে আত্মহত্যা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ তানভীর ইসলাম।
আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিমত জানতে কথা হয় রুয়েটের মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক সাইফুল্লাহর সঙ্গে।
তিনি বলেন, সুসাইডের মতো একটা ব্যাপারে কখনো একটা কারণে হতে পারে না। একাডেমিক প্রেশার, পারসোনাল সমস্যা অথবা অন্য কোনো কারণ এক সঙ্গে চাপ তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, রুয়েট প্রশাসনেরও কিছু সমস্যা আছে। রেজাল্টটা ঠিক সময় না দেওয়া। আমাদের সিস্টেম অনুযায়ী আমরা যদি কোনো সাব্জেক্টে লক খাই তাহলে আগামী সেমিস্টারে মিড ব্রেকের সময় লকটা ক্লিয়ার করতে হবে। যদি রেজাল্টই না দেয় তাহলে কি ভাবে বুঝবো কোনটাতে লক খেয়েছি। যদি এই সেমিস্টারে আবারো লক খাই তাহলে অনেকগুলো এক সাথে হয়ে গেলে কন্টিনিউ করা কঠিন হয়ে যায়। যার কারণে হতাশা কিংবা ডিপ্রেশন চলে আসে। এই কারণে হয়তো বা দেখা যায় সুসাইডের টেনডেন্সি চলে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদেকা বাবু অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আমাদের সময়েও আমরা ফেল করেছি। কিন্তুু আত্মহত্যার পথ বেচে নেইনি। কিন্তু বর্তমান জেনারেশনে কেউ তাদের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট না। আস্তার জায়গাটি তৈরি করতে পারছেনা।
এছাড়াও তিনি বলেন, পারিবারিক, পারস্পরিক যোগাযোগের গ্যাপ, সততা, মূল্যবোধের অভাব তো আছেই। শেষে গিয়ে হয়তো আমরা “আত্মহত্যা “একটা পরিণতি দেখছি কিন্তু এর পেছনে অনেক কারণ থেকেই যাচ্ছে। আশাহত না হয়ে কিংবা ক্যারিয়ারমুখি সীমাবদ্ধতার গন্ডি থেকে বেরিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া ও যতœ নেওয়া এবং খেলাধুলা এই বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাবির মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল হাসান সুফি বিটিসি নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদের আরেকটু ফ্রেন্ডলি হতে হবে। কো-কারিকুলাম কার্যক্রম যদি ব্যবহারিক হয় তাহলে ছেলেমেয়েরা সেই সব কাজে জড়িত হবে। বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারি কাজগুলোতে যোগ দিলে একজন আরেকজনের সাথে পরিচিত হবে।
এছাড়া তারা যে সমস্যাটাকে বড় মনে করছে সেই সমস্যার কথাটা যদি কোনো ক্রমে আরেকজনকে বলতে পারে তা হলে সেই শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু রিলাক্স কন্ডিশন আসবে। নিজের মনের কথা আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে পারলে হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিবে না।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.