রাবি ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের বিতৃষ্ণা

রাবি প্রতিনিধি:  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্র রাজনীতির দুর্দিনে বিতৃষ্ণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তৎপর হতে দেখা যায় না।

দলীয় সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও নেই শৃঙ্খলা। চাঁদাবাজি, ছিনতাই,আবাসনবাণিজ্য, সাংবাদিক লাঞ্ছনা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর এর পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মধ্যে শুধুমাত্র জাতীয় দিবসগুলোতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়া অন্য কোন আয়োজনে স্থবির মেয়াদোউত্তীর্ণ রাবি শাখা ছাত্রলীগ। অস্তিত্ব সংকটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের চাপে বিলুপ্তির পথে এ দলটি। ক্যাম্পাসেও নেই ছাত্রদলের কোন নেতাকর্মী। আর বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, জাতীয় ছাত্রদলের কার্যক্রম চলছে নামমাত্র। এরফলে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় এবং মননশীলতা বিকাশের পথও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর অস্থির হয়ে ওঠে রাবি ছাত্র রাজনীতি। তখন থেকেই শিবিরের আঁতুর ঘর হিসেবে পরিচিত রাবি ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। এক পর্যায়ে তারা ক্যাম্পাস থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বিতাড়িত করে ক্যাম্পাসে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। আর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরই নেতাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই শুরু হয়। দলটির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে। এ ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ডে ক্ষিপ্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।

‘রাবি ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। তাদের কোন কার্যক্রমও ক্যাম্পাসে চোখে পড়ে না। বর্তমানে এই বৃহৎ সংগঠনের নেতাকর্মী অনেক। কিন্তু আমাদের কোন ছাত্রবান্ধব বা দলীয় কোন প্রোগ্রাম হয় না। আমরা যদি লক্ষ্য করি চলতি আগস্ট মাস আমাদের কাছে শোকের মাস কিন্তু বৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ছাড়া অন্য  কোন  আয়োজন করতে দেখা যায়নি। যেটা ছাত্রলীগের অন্য বিভিন্ন ইউনিটে হয়েছে’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই বলছিলেন ছাত্রলীগের এক কর্মী।

তবে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতার আসার পর থেকে রাবি ছাত্রলীগের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘঠনা ছাড়া সবসময় ছাত্রবান্ধব কর্মসূচীতে ছিল। ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাচ্ছে রাবি ছাত্রলীগ। তবে কিছু ঘটনা আছে যেটা আমাদের ব্যর্থতার ঝুলি। কিন্তু আমি মনে করি ব্যর্থতার ঝুলি থেকে রাবি ছাত্রলীগের অর্জনের ঝুলিটায় অনেক বেশি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শোকের মাসে আমরা যে প্রোগ্রাম করিনি তা না শুধুমাত্র শোক টা আমরা ব্যানারে তুলে আনতে পারিনি কারণ আমাদের ক্যাম্পাস ২৪ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তাছাড়া আমরা ক্যাম্পাস খোলা অবস্থায় সাংগঠনিক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে সবসময় এগিয়ে যাচ্ছি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় তিন বছর হলো। দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটি পার করেছে প্রায় পাঁচ বছর। এরপর নিজেদের মধ্যে কোন্দল ও গ্রুপিং করেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে কিংবা হলে তাদের স্থায়ীভাবে দেখা যায় না। কোন্দলের কারণে ছাত্রদলের কর্মী সংখ্যাও কমছে। অনেকে ভুলেই গেছেন যে, রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নামে কোন সংগঠন আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের এক কর্মী বলছেন, ‘নতুন কমিটি না হওয়ায় সংগঠনের তরুণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। যারা দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে থেকেও মূল্যায়ন পাচ্ছেন না তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন, অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ফোকাসিং না থাকায় নতুন কর্মীও সংগঠনে আসছে না।’

সাংগঠনিক কাজের এমন স্থবিরতা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রাবি ছাত্রদলের একটি গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু কমিটির জন্য কর্মীসভা, কাউন্সিল ইত্যাদি’র কারনে মুছে যাচ্ছে আমাদের ইতিহাস। অনেক সময় ধরে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম, জেল-জুলুমের কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। তবে আমরা কেন্দ্রকে অবগত করেছি। শিগগিরি রাবি শাখায় নতুন নেতৃত্ব আসবে।’

মৌলবাদে বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। তাদের আঁতুর ঘর হিসাবে পরিচিত ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ২০০৯ সাল থেকে হামলা-মামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এক সময় মৌলবাদে বিশ্বাসী এই ছাত্র সংগঠনটি হাজার হাজার কর্মী নিয়ে দাঁপিয়ে বেড়ানো সংগঠনটি এখন প্রায় বিলীনের পথে।

ছাত্র উনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রমৈত্রী দলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে সোচ্ছার হলেও নিজেদের এককভাবে কোনো কর্মসূচি নেই। বাম রাজনীতির বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, আমাদের রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনিয়ম অবিচারের বিপক্ষে সবসময় সোচ্ছার।

এদিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকেই দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন- ছাত্র সংগঠনগুলো সবসময় আবাসিক হলগুলো দখল করে রাখেন। এবং তাদের ভিতর কোন্দলের কারনে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তারা নিজেদের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে সবসময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। এ সমস্যা সমাধানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম মাহমুদ বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই রাকসু র্নিবাচন। কারণ ছাত্র সংগঠনগুলো সবসময় তাদের চিন্তা ধারা নিয়েই থাকে। ছাত্রসংসদ না থাকায় আমরা আমাদের মতো অধিকার আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.