রাবির হলে সিট বন্টনে হল প্রশাসনের নাভিশ্বাস

রাবি প্রতিনিধি:  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) দেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল ১৭টি। এসব হলের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসিক সুবিধা রয়েছে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থীর। এর ভিতর মেয়েদের ৫টি হলে নিয়মিত ভাবে আসন বরাদ্দ এর মাধ্যমে ছাত্রীদের আবাসিকতা দেওয়া হলেও ছেলেদের একটি হল ছাড়া বাকি ১০টি হলে নিয়মিত আসন বরাদ্দ এর মাধ্যমে আবাসিকতা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ছেলেদের হলগুলোতে নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এছাড়াও হলে সিট পেয়ে মাসের পর মাস নিজের সিটে উঠতে পারছে না অভিযোগ ছাত্রদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল বাদে অন্যান্য হলগুলোতে বছরে এক দুই বার আসন বরাদ্দ দেওয়া হলেও খুব অল্প সংখ্যক সিট দিতে পারে হল প্রশাসন তাছাড়া বাকি সিট গুলো ছাত্রলীগের দখলে চলে যায়। আবার সিট প্রদান করেও অনেক ছাত্রদের হলে উঠাতে গিয়ে হল প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখল করা হল গুলোর মধ্যে অন্যতম- নবাব আব্দুল লতিফ হলে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, শহীদ শামসুজ্জোহা হল। এছাড়াও শের-ই বাংলা হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, শাহ মখদুম হল, সৈয়দ আমীর আলী হল, মাদার বখশ হল,শহীদ জিয়াউর রহমান হল সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ সিট ছাত্রলীগের অবৈধ দখলে আছে বলে জানা যায়।

হলগুলোর এমন অবৈধ দখলে হল কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় এর মাশুল গুনতে হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বলে মনে করেন অনেকেই। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই হলে সিট ভাড়া দিয়েও সিটে উঠতে পারছেনা। কর্তৃপক্ষ সিট বরাদ্দ দিলেও হলে উঠতে হলে ছাত্রলীগের মাধ্যমে তাছাড়া কোনো উপায় নেই। সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনের এমন নিশ্চুপ ভূমিকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হলের প্রাধ্যক্ষ বিটিসি নিউজকে জানান, ‘আমাদের হলগুলোতে অবৈধ উপায়ে থাকা পলিটিক্যাল ছাত্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমরা অনেক ছাত্রের আবাসিক পাওয়া যোগ্যতা থাকলেও আমরা আসন বরাদ্দ দিয়েও তাদের সিট দিতে পারছি না। এবং প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগ মাধ্যমে হলে ওঠা ছাত্রের সংখ্যা বাড়ছে। যা সাধারন শিক্ষার্থী যারা আবাসিকতা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে তারা এখান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

ছেলেদের হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি ছাত্র হলে মোট সিট প্রায় ৬হাজার এর ভিতরে অনাবাসিক হিসাবে ছাত্রলীগ নেতাদের দখলে আছে প্রায় ৫০০ সিট। আর হলের সিট ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ১শ’ টাকা দিতে হয়। পরোক্ষ ভাবে অনেক সিট ছাত্রলীগের দখলে থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রলীগ নেতাদের এই সিট দখলে বছরে ৬ লক্ষ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মেয়েদের হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি ছাত্রী হলের সিট সংখ্যা প্রায় ৪৫০০। তবে মেয়েদের আবাসিকতার জন্য গনরূম নিয়ে প্রায় ৫০০০ ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মেয়েদের হলে মেধাতালিকার মাধ্যমে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে জানান হল প্রশাসন এবং ছাত্রীরা। তবে মেয়েদের আবাসন সঙ্কট আরও কমবে যখন নির্মানাধীন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও রহমতুন্নেছা হলের কাজ শেষ হবে। তখন প্রায় ১৫০০ হাজার অতিরিক্ত ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা করা হবে জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের এক অনাবাসিক ছাত্র বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রথম বর্ষ থেকে হলের সিটের জন্য ভাইভা দিয়ে আসছি। কিন্তু আমার এখনও সিট হয়নি। অন্যদিকে আমার অনেক জুনিয়র যার এখন হলে থাকে ছাত্রলীগ এর মাধ্যমে। বিশ^বিদ্যালয়ের ছেলেদের সব হলে ছাত্রলীগ আলদা ব্লক হিসাবে ৬০-৭০ টা সিট দখল করে আছে। যেগুলো থেকে আমারা সাধারন শিক্ষার্থী হওয়াতে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছি। এবং পুরো হলে যেন ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রন করে। আর যেখানে হল প্রশাসন যেন ছাত্রলীগের কাছে অসহায়।’

হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. সাবিনা সুলতানা বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি হলে সিট দেওয়ায়। তবে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সার্বিক বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী হলের সিট ভাড়া দিলেও হলে উঠতে না পারাটা কষ্টদায়ক। তবে আসন বরাদ্দ এবং অবৈধ সিট দখল এর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক তিনি বলেন হলগুলোর এসব বিষয়গুলো হল প্রাধ্যক্ষরা আমাদের জানায়নি। তারা আমাদের অবহিত করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.