রাবির নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছিলেন উপাচার্য!

বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সকল নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বহুল আলোচিত নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত পত্রের কার্যকারিতা ‘স্থগিত’ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। উপাচার্যের ওই সিদ্ধান্তের পরদিনই একজনকে এডহক নিয়োগ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ের আগের দিন ১৩৮ জনকে এডহক নিয়োগ দেন রাবি উপাচার্য। এ তথ্যের স্বপক্ষে রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য স্বাক্ষরিত নথি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাবির সকল নিয়োগ ‘স্থগিত’ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের ওই পত্রটি গত ৮ জানুয়ারি এক ফাইল নোটে অধীণস্থ কর্মকর্তা রেজিস্ট্রারের নিকট উপস্থাপন করেন।
১০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার “ক” চিহ্নিত বিষয়টি নির্দেশের জন্য উপাচার্যের নিকট উপস্থাপন করেন। ওইদিনই উপাচার্য “ক-এ বর্ণিত বিষয়টি স্থগিত রাখা’র সিদ্ধান্ত দেন। ফলে রাবির নিয়োগ ‘স্থগিতে’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রের কার্যকারিতা এতদসঙ্গে ‘স্থগিত’ হয়ে যায়। এর পর রাবির নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি। এমনকি নতুন করে নিষেধাজ্ঞার কথা কেউ বলেননি।
নথি সূত্রে জানা যায়, পরদিনই রেজিস্ট্রার, শারীরিক প্রতিবন্ধী জামাল উদ্দিনের এডহক নিয়োগ পত্র (নং-৩৭০/১ই-৭৩৪৮/স:শা, তারিখ: ১১-০১-২০২১) ইস্যু করেন। ওইদিনই জামাল উদ্দিন রেজিস্ট্রার দফতরে যোগদান করেন। যিনি এখনো রাবিতে স্বপদে চাকরি করছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রগুলো বলছে, গত ২ ও ৪ মে উপাচার্যের শেষ অর্থকমিটি ও সিন্ডিকেট সভা তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের বাধায় পÐ হয়। পরদিন ৫ মে উপাচার্য রেজিস্ট্রারকে ছাত্রলীগ নেতাদের এডহক নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন। কিন্তু রেজিস্ট্রার উপাচার্যের নির্বাহী আদেশ ‘অমান্য’ করে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে আত্মগোপনে চলে যান।
সূত্র মতে, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারকেও না পেয়ে উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের দায়িত্ব দেন উপাচার্য। ৬ মে দুপুরে যোগদান চলাকালে উপাচার্য পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন। এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের উপাচার্য বলেন, ‘১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ এর ১২(৫) ধারায় অর্পিত ক্ষমতার বলে আমি এই নিয়োগ দিয়েছি। প্রচলিত আইনে এই নিয়োগ বাতিলের সুযোগ নেই।’
প্রসঙ্গত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদায়ী উপাচার্যের এডহক নিয়োগকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা এবং জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ সংক্রান্ত পত্রের তারিখ: ০৬ এপ্রিল ২০২১ খিস্ট্রাব্দ উল্লেখ ছিল। ওইদিনই পৃথক প্রজ্ঞাপনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে রাবি উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরপর গত ২৮ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাবি নিয়োগ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করেছে। কমিটির আহবায়ক বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সিনিয়র সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম। পূর্বের তদন্ত কমিটির তিন সদস্যকে ফের সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে রাবির ‘নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা’র কথা বলেন রেজিস্ট্রার নিজের প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্ববিরোধীতা করছেন। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিয়োগের যোগদান স্থগিত করেছেন। তবে নিয়োগপ্রাপ্তরা কর্মে যোগদানের জন্য দু’দফা সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা বলেন, নিয়োগ বাতিলে রুটিন উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। তারা প্রতিনিয়ত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ১৯৭৩ এর রাবি এ্যাক্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
এ বিষয়ে রারির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ওই পত্রের (নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা) কার্যকারিতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ প্রতিপালনের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন কোনো আদেশ দেয়, তখন সেটা অবশ্য পালনীয় হয়। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশ প্রতিপালনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন উপাচার্য।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.