রাবির একদল গবেষকের ধান ও গমের ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধে সাফল্য

রাবি প্রতিনিধি: দীর্ঘ দুই বছরে ৩০টি ধানের জাতের ওপর গবেষণা চালিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক ধান ও গমের ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধ গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন। এরই মধ্যে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ দুটি যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসের দুটি জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহমদ হুমায়ন কবীর জানান, ক্যাডমিয়াম আর্সেনিকের মতোই এক ধরনের টক্সিন, যা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম কৃষি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ক্যাডমিয়াম ক্যান্সার রোগেরও কারণ। অঞ্চলভেদে বাংলাদেশের মাটিতে ক্যাডমিয়ামের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কল-কারখানার বর্জ্যসহ বিভিন্ন দূষিত পদার্থে ক্যাডমিয়াম থাকে। এসব বর্জ্য নদীতে বা পুকুরে ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি দূষিত হওয়ার পাশাপাশি কাছাকাছি থাকা আবাদি জমিগুলোতে ক্যাডমিয়াম ছড়িয়ে পড়ছে। এই পদার্থ মাটি থেকে বের করে নেওয়া অসম্ভব। তাই ২০১৭ সালের শুরুতে তাঁর নেতৃত্বে দুটি গবেষকদল ধান ও গম নিয়ে গবেষণা শুরু করে। তারা ৩০টি জাতের ধান নিয়ে গবেষণা করে।

গবেষকদলের পিএইচডি গবেষক আজিজুল বারি ধানের জাতগুলোর মধ্যে ‘সোনার বাংলা’ নামের একটি জাতের মাত্রাতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম সহিষ্ণু সম্পর্কিত ঋজউও, ঘজঅগচও, ওজঞও, চঈঝও জিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। গবেষণায় তাঁরা দেখতে পান, এই জিনগুলো মাটিতে বিদ্যমান ক্যাডমিয়ামকে গাছে বা বীজে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে। আর যদি প্রবেশ করেও তাহলে জিনগুলো ক্যাডমিয়ামকে গাছের শিকড়ে থাকা ভ্যাকিউলে (গহ্বর) জমা করে। ভ্যাকিউলের কোষগুলো খুব শক্তিশালী হওয়ায় তা ক্যাডমিয়ামকে গাছে ছড়িয়ে পড়া থেকে রোধ করে, যা অন্য জাতের ধানগুলোতে নেই।

এ ছাড়া গমগাছে ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধের জন্য আহমদ হুমায়ন কবীর পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত প্লজমা ট্রিটমেন্ট কৌশলের প্রয়োগ করেন। মাটিতে পিএইচের মাত্রা ৫-এর নিচে হলে তা ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধ করতে পারে না। প্লাজমা ট্রিটমেন্টের জন্য গমের বীজগুলোকে একটি বায়ুশুন্য আবদ্ধ কাচের পাত্রে রাখা হয়। প্রায় এক মিনিট ১৫ সেকেন্ড ধরে তাতে বাইরে থেকে বিভিন্ন ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এর ফলে বীজগুলোতে ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। হুমায়ন কবীর বলেন, প্লাজমা ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করে শস্যে ক্যাডমিয়াম দূরীকরণে এই তথ্য বিশ্বে প্রথম। এর মাধ্যমে শস্যের ফলন বৃদ্ধি এবং খাদ্যসামগ্রীতে ক্যাডমিয়াম দূর করে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি সম্ভব। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ‘সোনার বাংলা’ ধানের জাতটি খুব পপুলার নয়। ধান গবেষণা কেন্দ্র যদি অন্য জাতের ধানগুলোর সঙ্গে ক্রস করে তাহলে এর ক্যারেক্টারগুলো অন্য জাতে স্থানান্তর করা সম্ভব। যদি ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধ করা যায় তাহলে আমরা স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগতভাবে উপকৃত হব।”

গবেষকদলে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইউজিসি অধ্যাপক এম আলফাজ উদ্দীন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক আবু রেজা, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মামুনূর রশিদ তালুকদারসহ উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ১১ জন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.