রাজশাহী মহানগরীতে কঠোর লকডাউন পালিত হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদকরাজশাহী মহানগরীতে প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার (১১ জুন) বিকাল ৫টা থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। তবে এর আগে থেকেই নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কেট, দোকানপাট, শপিংসহ গণপরিবহন চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা তা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানেই থাকতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
এদিন বিকেলে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাচা বাজারে কিছু লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়, কিছু রিক্সা ও অটো রিক্সা চলাচল করলেও পুলিশি বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। মহানগরী থেকে পরিবহণ বাইরে যেতে দিলেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নগরীতে কোন পরিবহণ প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে যেসব গাড়িগুলো নগরীতে প্রবেশ করছে তাদের প্রত্যেককেই নগরীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়া আইনশৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
এছাড়া যেসব পরিবহণ নির্দেশনার আওতার মধ্যে আছে তাদের ফিরিয়ে দিতেও দেখা গেছে। একই সাথে নগরীর বিভিন এলাকায় ঘুরে বেড়ানো জনসাধারণকে ঘুরমুখি করার জন্য মাইকিং করে সর্তকতা করা হচ্ছে। নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রায় ঘ›ণ্টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায়। যদিও নগরীর ছোট গলিগুলোতে মানুষের অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
নগরীর প্রবেশমুখ কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় পুলিশের বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোদাগাড়িসহ পাশর্^বর্তী উপজেলার গাড়ি নগরীতে প্রবেশে কড়াকড়ি ছিলো। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে তারা কাজ করছেন।
এদিকে হঠাৎ নগরীতে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায় জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিসহ সাধারণ যাত্রীরাও ভোগান্তির শিকার হয়। গাড়ি না পেয়ে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটেও বাড়ি ফিরতে দেখা যায় অনেককেই। একইসঙ্গে জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকেও পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। এসময় হাতেগোনা যে কয়েকটি অটো রিকশা চলছিলো সেখানেও তিন থেকে পাঁচগুন বেশি ভাড়া আদায় করতে করতে দেখা যায়।
নগরীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করেন আসলেমা বেগম। তিনি নগরীর বহরমপুর এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, এক ডাক্তারের চেম্বারে কাজ করেন। ৫ টার সময় বাসা থেকে বের হয়েছেন। পথে তিনবার বাঁধার সম্মুখিন হয়ে তিনটা গাড়ি চেঞ্জ করতে হয়েছে। এখন আবার গাড়ি নিতে হবে। কিন্তু কোনো অটো নেই। রিকশাওয়ালা পাঁচগুন বেশি ভাড়া চাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। এ সময়ে বিধিনিষেধ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস গণমাধ্যমকে বলেন, রাত থেকেই লকডাউনের বিষয়ে বিধিনিষেধগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পুলিশ মাইকিং শুরু করেছে। নগরে এই সাত দিন কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, সে বিষয়ে মানুষকে বার্তা দেয়া হচ্ছে। মহানগর পুলিশের ১২ থানার পাশাপাশি লকডাউন বাস্তবায়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। মহানগর পুলিশের সঙ্গে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সও কাজ করবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের কাছে আনসার সদস্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে বিধিনিষেধ অনুযায়ী মহানগরের সব প্রবেশপথে পুলিশ শক্তভাবে অবস্থান নেবে।
রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বিটিসি নিউজকে জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোরভাবে কাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন মানুষকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজশাহী জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে এ লকডাউন বাস্তবায়ন করছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.