রাজশাহীর পবা থানা পুলিশের অভিযানে সংঘবদ্ধ অপহরণচক্রের ০৪ জন আটক

আরএমপি প্রতিবেদক: গত ইং ১৯/১১/২০২০ তারিখ রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানাধীন জাহানাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান এর ছেলে মোঃ আব্দুল হক (৪৩) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ তার চাচাকে দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।

সেখানে নার্গিস নাহার হেলেন তাকে দেখতে পেয়ে ডাকেন। তার নিকট গেলে নার্গিস নাহার হেলেন এর অনেক পরিচিত লাগছে জানিয়ে মোঃ আব্দুল হক (৪৩) এর নিকট হতে তার মোবাইল নাম্বার চান। তখন মোঃ আব্দুল হক (৪৩) সরল বিশ্বাসে তাকে মোবাইল নাম্বার দেন। ইং ২০/১১/২০২০ তারিখ সকাল ১০.০০ ঘটিকা হতে নার্গিস নাহার হেলেন বেশ কয়েক বার মোঃ আব্দুল হক (৪৩)কে কল করে।

শেষ কল দুপুর অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় ফোন রিসিভ করলে মোসাঃ নার্গিস নাহার হেলেন জরুরী প্রয়োজনে দেখা করতে চায় এবং খুবই আকুতি মিনতি করে বায়া বাজার নামক স্থানে মোঃ আব্দুল হক (৪৩)কে আসতে বলে। মোঃ আব্দুল হক (৪৩) একই তারিখ দুপুর ১২.৩০ ঘটিকার সময় বায়া বাজারে পৌছানোর পর সে একটি অজ্ঞাতনামা অটো নিয়ে এসে মোঃ আব্দুল হক (৪৩)কে অটোতে উঠতে বলে। মোঃ আব্দুল হক(৪৩) সরল বিশ্বাসে তার কথা মত অটোতে উঠলে সে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে কৌশলে তাকে অপহরণ করে পবা থানাধীণ চৌবাড়িয়া গ্রামস্থ আসামীর বসতবাড়ী পরিচয়ে একটি একতলা সাদা রংয়ের টাইলস করা বাড়ীতে নিয়ে যায়। মোঃ আব্দুল হক (৪৩) আসামী নার্গিস নাহার @ হেলেন এর সাথে উক্ত বাড়ীতে প্রবেশ করতেই আসামী ১। মোসাঃ নার্গিস নাহার হেলেন ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয় এবং অজ্ঞাতনামা ৩ জন পুরুষ মোঃ আব্দুল হক(৪৩)কে লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ী মারপিট করতে থাকে।

মারপিটের একপর্যায়ে নার্গিস নাহার হেলেন মোঃ আব্দুল হক(৪৩) এর নিকট নগদ ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় মারপিট করে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে এবং পরিহিত প্যান্টের ডান পকেটে থাকা চিকিৎসা বাবদ নগদ ২০,০০০/-(বিশ হাজার) টাকা নিয়ে যায়।

এরপর ৩০ বছর বয়সের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মোঃ আব্দুল হক(৪৩) এর মোবাইল নাম্বার হতে তার স্ত্রী মোসাঃ রহিমা বেগম এর নাম্বারে ফোন করে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মুক্তিপণ হিসাবে ৩০,০০০/- টাকা দাবি করে, অন্যথায় মোঃ আব্দুল হক (৪৩)কে হেরোইন দিয়ে চালান করবে নতুবা ক্রসফায়ার দিয়ে প্রাণনাশ করবে মর্মে জানালে তার স্ত্রী বিবাদীগণের কথামতে মোঃ আব্দুল হক (৪৩) এর ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে দুইটি নাম্বার হতে ১০০০০/- টাকা করে সর্বমোট ২০০০০/-(বিশ হাজার) টাকা পাঠায়।

পরবর্তীতে বিবাদীগণ উক্ত টাকা মোঃ আব্দুল হক (৪৩) এর ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বার হতে ক্যাশ আউট করে নিয়ে যান। অতপর একটি টিভিএস ষ্ট্যাইকার কালো রংয়ের মোটরসাইকেল রেজিষ্টিশন নং- রাজ মেট্রো-হ-১১-১৩৯০ যোগে ২৩ ও ২৬ বছর বয়সের দুইজন লোক কর্ণহার থানাধীন করমজা মোড়ে নিয়ে মোঃ আব্দুল হক (৪৩)কে নামিয়ে দেয় এবং মোঃ আব্দুল হক (৪৩) এর মোবাইল ফোন ফেরৎ দিয়ে দ্রুত পবা থানাধীন চৌবাড়িয়া গ্রামের দিকে চলে আসে।

যার প্রেক্ষিতে পবা থানার মামলা নং-২৯, তাং-২১/১১/২০২০, ধারা-৩৬৫/৩৪২/৩২৩/৩৮৬ পেনাল কোড রুজু করে এসআই(নিরস্ত্র) মোঃ রেজাউল করিম এর উপর তদন্তভার অর্পন করা হয়। এসআই(নিরস্ত্র) মোঃ রেজাউল করিম মামলা তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করেই ইং ২২/১১/২০২০ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৪.১৫ ঘটিকার সময় জনাব শেখ মোঃ গোলাম মোস্তফা, অফিসার ইনচার্জ, পবা থানা, জনাব মোঃ বানী ইসরাইল, পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত), পবা থানাদ্বয়ের নেতৃত্বে এসআই(নিঃ) আকতার হোসেন, এএসআই/ নওশাদ আলী, এএসআই/ অলিউল আলম সঙ্গীয় নারী কং/৩৭৬ রুবিনা খাতুন, নারী কং/১৪২০ মাকসুদা খাতুনসহ সঙ্গীয় আরো ফোর্সের সহযোগিতায় সহযোগিতায় আসামী ১। মোসাঃ নার্গিস নাহার হেলেন (৫৫) স্বামী- মোঃ ইউসুফ আলী মাষ্টার, সাং-চোবাড়ীয়া, থানা-পবা, মহানগর রাজশাহীকে পবা থানাধীণ চৌবাড়িয়া গ্রামস্থ একটি একতলা সাদা রংয়ের টাইলস করা বাড়ী হতে মহিলা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী অপরাপর সহযোগী আসামী ১। মোঃ রফিকুল ইসলাম(৩০) পিতা-মৃত আব্দুল সামাদ তালেব, সাং-রোড নওদাপাড়া, থানা-শাহমখদুম, ২। মোঃ আতিকুর রহমান বাপ্পী (২৮) পিতা- মোঃ আমিনুর রহমান, সাং-অলকার মোড়, থানা-বোয়ালিয়া, ৩। হামিম আল ফজলে নুর ওরফে শুভ্র (২৮) পিতা-মৃত শফিকুল আলম@ শরিফুল, সাং-নামোভদ্রা (হযের মোড়) পদ্মা আবাসিক, থানা-চন্দ্রিমা, সর্ব মহানগর রাজশাহীগণদের গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

বিবাদীগনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় মোসাঃ নার্গিস নাহার হেলেন (৫৫) বিভিন্ন লোকদের টার্গেট করে তাদের সাথে বিভিন্ন অজুহাতে মানবিক সাহায্যর আবেদন চেয়ে মোসাঃ নার্গিস নাহার হেলেন (৫৫) কৌশলে অপরহণ করে তার পবা থানাধীণ চৌবাড়িয়া গ্রামস্থ তার বাড়ীতে নিয়ে আসেন। তখন তার সহযোগী ১। মোঃ রফিকুল ইসলাম(৩০), ২। মোঃ আতিকুর রহমান বাপ্পী (২৮) ৩। হামিম আল ফজলে নুর ওরফে শুভ্র (২৮) মারপিট করে এবং নগ্ন করে ছবি তোলে মুক্তিপণ আদায় করে এবং মুক্তিপন আদায় শেষে ভিকটিমকে মোটরসাইকেল রাজ মেট্রো-হ-১১-১৩৯০ যোগে ঘটনাস্থল হতে বিভিন্ন স্থানে নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ঘটনা গোপন রাখার জন্য বলে। তারা নিজেদের মধ্যে যোগসাজোসে ইতিপূর্বে একাধিকবার এইরকম ঘটনা ঘটিয়েছে মর্মে জানায়।

ঘটনার আরো বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনসহ জড়িত অন্যান্য আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে আসামীদের রিমান্ড আবেদন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, বর্ণিত আসামী ১। মোঃ রফিকুল ইসলাম(৩০), ২। মোঃ আতিকুর রহমান বাপ্পী (২৮), ৩। হামিম আল ফজলে নুর ওরফে শুভ্র (২৮)দের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহাগরীর ১। চন্দ্রিমা থানার মামলা নং-৬, তারিখ-০৮/১২/২০১৯ ইং, ধারা-৩৬৫/৩৪২/৩২৩/৩৮৫ /৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড, ২। চন্দ্রিমা থানার মামলা নং-১২, তারিখ-১০/১১/২০১৯ ইং, ধারা-৩৮০ পেনাল কোড রুজু আছে এবং পূর্বেও একই রখম ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ০৩ জনের বিরুদ্ধে পবা থানায় একটি মামলা রুজু হয় যা পবা থানার মামলা নং-১৮, তারিখ-২৮/০৯/২০২০ ইং, ধারা-৩৬৫/৩৪২/৩২৩/৩৮৬ পেনাল কোড।

সংবাদ প্রেরক রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার(সদর) মোঃ গোলাম রুহুল কুদ্দুস এর পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.