রাজশাহীর খেত-খামারে চাষিরা কোন প্রকার সুরক্ষা না মেনেই কাজ করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মাটিতে সোনা ফলায় যারা তারা বড়ই অবহেলিত। তাদের নাম কৃষক। যারা অনেক সময় নায্য পণ্যের দাম পায় না,অথচ তাদের উৎপাদিত পণ্যের যারা ব্যাবসা করছে তারা গাড়িতে ঘুরছে।

বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুরক্ষা না মেনেই রাজশাহীর খেত-খামারে চাষাবাদ করছেন চাষিরা। এতে করে ঝুঁকির মুখে রয়েছেন কৃষক। কৃষকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চাষাবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ও স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর ও সাব্দিপুর এলাকায় কৃষক শ্রমিকরা গম, ভুট্টা, ছোলা (বুট), মুশরি ও পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে উঠাচ্ছেন। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে পেঁয়াজ তুলছেন ও গম কাটছেন খেতমজুররা। সেইসাথে বোরো ধানের পরিচর্যা অব্যাহত রেখেছেন তারা । শুধু তাই নয়, তাদের হাতে কোনো গ্লাভস কিংবা মুখে মাস্ক নেই। এমনকি পাট খেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন কোনো প্রকার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই।

এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলার কদম হাজি মোড় এলাকার  কয়েকজন কৃষক ও শ্রমিক জানান, তাদেরকে কৃষি অফিস থেকে কোনো দিকনিদের্শনা দেয়া হয়নি। তবে অন্যদের মুখে মাস্ক পরে থাকতে দেখেছেন। তাদের দেখে দুই একজনের সাথে মাস্ক নিয়ে এনেছেন। কিন্তু খোলা মাঠে সকালের বাতাস উপভোগের কারণে তা পরা হয়নি।

করোনাভাইরাস অন্যদের কাছ থেকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলার ভাটুপাড়া এলাকার চাষি মোখলেসুর রহমান জানান, আমাদের এলাকায় এখনও এই ভাইরাস আসেনি। তাই আমরা ব্যবহার করেনি।

গোদাগাড়ী উপজেলার লালবাগ এলাকার ও রাজাবাড়িহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, আমাদের এলাকায় চাষিদের মুখে কোনো মাস্ক ও হাতে গ্লাভস দেখা যায় না। কৃষকদের সচেতন করতে হবে। তাদেরকে কৃষক মাঠ স্কুলে নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নয়, জেলার অন্য উপজেলায় কৃষকদের চাষাবাদ ও করোনাভাইরাসের প্রভাবে কোনো সচেতনতা কিংবা বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি।

তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের কৃষক এখলাসুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, জমি থেকে আলু উঠিয়ে হিমাঘরে রাখা হয়েছে। এখন দেরি করে বোরো আবাদ করছি। সরকার থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়নি।

পবা উপজেলার দর্শনপাড়া এলাকার একজন কৃষক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে হাট-বাজারে মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। তাই খেত থেকে পেঁয়াজ উঠানোর পরও দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না। আবার বেশিদিন ঘরে রাখলে মুড়িকাটা পেঁয়াজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সবাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। তাই সচেতন হতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদেরকে কৃষিকাজসহ সব কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।

মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রহিমা খাতুন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ২৫ মার্চ ২০২০ সকল অনুমোদিত সার, কীটনাশক ডিলারদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সার, কীটনাশক বিক্রয় করা যাবে বলে নোটিশ জারি করা হয়েছে। তবে দোকানে বসে লোকজন নিয়ে গল্প করলে ডিলারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কৃষকদের সুরক্ষার প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক শামসুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, চাষাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তবে খুব প্রয়োজন ছাড়া কৃষকদের মাঠে যেতে মানা করছি। আর গেলেও মাস্ক পরে যেতে বলা হচ্ছে। আর বাড়িতে ফিরে সাবান দিয়ে হাত-পা-মুখ পরিষ্কার করার জন্য ম্যাসেজ দিচ্ছি। কোনো কৃষকের সার দিতে সমস্যা হলে প্রশাসনের মাধ্যমে কৃষকদের হেল্প করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে এখনও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি। আগের চেয়ে কৃষকরা এই পরিস্থিতিতে দাম একটু কম পাচ্ছে। আর এখন খেত থেকে বেশি পরিমাণে উঠছে গম ও পেঁয়াজ। তবে গম পচনশীল নয়, পেঁয়াজ আরও ৫ মাস ঘরে রাখা যাবে। কৃষকদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেতে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.