রাজশাহীর আম বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সুস্বাদু জাতের আমের কথা উঠলেই চলে আসে রাজশাহীর নাম। রাজশাহীর আমের মধ্যে বাঘা উপজেলার আম বিখ্যাত। বাঘা উপজেলার মাটি গুনগত আম চাষের জন্য উপযোগি। ফলে বাঘার আমের খ্যাতি দেশজুড়ে।

 

এ উপজেলার আম চলতি মৌসুমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, রাশিয়া রপ্তানি করা হবে। গত তিন বছর থেকে শুরু হয়েছে এ উপজেলার আম রপ্তানি কার্যক্রম। হটেক্স ফাউন্ডেশন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমে এই আম রপ্তানির কাজ শুরু করা হয়েছে। বাঘা উপজেলার আমের মধ্যে ফজলি, খেরসাপাত, গোপালভোগ, মহনভোগ, ল্যাংড়া বিখ্যাত। এই আমের নাম মানুষের সবার মুখে মুখে।

এছাড়া বৌ-ভুলানি, রানি পছন্দ, জামাই খুশি, বৃন্দাবন, তুতাপরি, লোকনা, বোম্বাই, খেরসাপাত, দাউদ ভোগ, সেন্দুরি, আমরোপালি, আশ্বিনা, ব্যানানা, মল্লিকা, ক্ষুদি খেরসাপাত, কালীভোগসহ প্রায় শতাধিক জাতের আম রয়েছে। প্রতি বছর আম মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বাঘা উপজেলায় কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় আম বাগান রয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। এ উপজেলার মানুষ প্রতি বছর আম মৌসুমে আয় করেন প্রায় চার থেকে পাঁচ’শ কোটি টাকা।

জানা গেছে, গত বছর আম রপ্তানির জন্য ৫০ জন বাগান মালিককে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে সনদপত্র প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চাষিরা কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাগানে উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি আম ঢাকা বিএসটিআই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম বাগান পরিদর্শন করেন। ফলে এ উপজেলার আম বিদেশে রপ্তানি যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করেন। তারপর থেকে আম রপ্তানি শুরু করা হয়। চলতি মৌসুমে চলমান থাকবে।

উপজেলা প্রশাসক রোববার (২০ মে) থেকে গুটি জাতের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে চাষিরা গাছ থেকে আম পাড়তে শরু করেছে। ২৫ মে আগাম জাতের গোপালভো, ২৮ মে হিমসাগর, খেরসাপাত, লক্ষণভোগ, ১ জুন থেকে ল্যাংড়া, ৫ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ফজলী, ১ জুলাই থেকে আস্বিনা আম চাষিরা গাছ থেকে পেড়ে রপ্তানী করতে পারবে।
বাঘার আম রাজধানী ঢাকা, নরসিংদী, ভৈরব, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ফেনীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে কেনাবেচা হয়। কিন্তু এখন এ আম আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিদেশে রপ্তানি শরু হয়েছে। ফলে চাষিদের মধ্যে আম রপ্তানীর বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।

কলিগ্রামের আম চাষি (লিড ফার্মার) আশরাফুদৌল্লা, আড়পাড়া গ্রামের মহসীন আলী বলেন, গতবারের ন্যায় এবারো আম রপ্তানীতে সফল হলে আগামী বছর থেকে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ হবে।

রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলার মধ্যে আম প্রধান উপজেলা হিসেবে বাঘার আম ব্যাপক পরিচিত। প্রতি বছর আমের এই মৌসুমে গ্রামে গ্রামে আমের বাজার গড়ে ওঠে। এইসব বাজারে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আম ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটান। ব্যবসায়ীরা চুক্তি মূল্যে বাগান কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আম চালান করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বসে থাকে না। তারা আম ফেরি করে গ্রামে গ্রামে ক্রয় করেন। স্বল্প পরিসরে এগুলো নিকটতম বাজারে বিক্রি করে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, বাঘা উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগি।ফলে এই দেশে চাহিদা মিটিয়ে বিদেমে রপ্তানি করা হচ্ছে।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, অনেক জায়গায় চাকরি করেছি, আমও খেয়েছি। কিন্তু বাঘার আমের স্বাদ ও গুণগতমান অতুলনীয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.