রাজশাহীতে হাসপাতালের সামনে ভাগাড় নির্মাণ বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঐতিহ্যবাহী  রাজশাহীর ১০০ বছরের পুরনো খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালের সামনে ভাগাড় নির্মাণ কাজ শুরু করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। ঐতিহ্যবাহী এই হাসপাতালের সামনে ভাগাড় নির্মানের কাজ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সেরা।

আজ বুধবার (০৫ মে) সকাল অনু: ১০টায় হাসপাতালের সামনে এই কর্মসূচিতে খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, গীর্জা বাড়ি ও সিটিচার্চ এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে তাঁরা ভাগাড় স্থানান্তরের দাবি জানান। হাসপাতালের সামনে থেকে ভাগাড় না সরালে কঠোর আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ চাঁদ মণ্ডল।
নগরীর চণ্ডিপুর এলাকায় এই হাসপাতালের সামনে রাস্তার ধারে দীর্ঘদিন থেকেই বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলে রাখা হতো। রাসিকের পরিচ্ছন্নকর্মীরা দিনভর শহরের বিভিন্ন মহল্লার ময়লা এনে এখানে জমা করতেন। রাতে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা তুলে নগরীর উপকণ্ঠ সিটিহাট এলাকায় ভাগাড়ে ফেলা হতো। এখন সেখানে ময়লা-আবর্জনার একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
রাসিক যে স্থানটিতে এসটিএস নির্মাণ করছে তাঁর সামনেই নার্সিং শিক্ষার্থীদের আবাসিক এলাকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে ভাগাড়ের দুর্গন্ধে টেকা যায় না। আবাসিক কোয়ার্টারে ১০০ মেয়ে থাকে। তাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়। পাশেই নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয়। তিনিও বসতে পারেন না। একটু দূরে গীর্জা। সেখানেও দুর্গন্ধ পৌঁছে যায়। তাই তাঁরা এটি বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য যে, গত সোমবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। সেদিনই এলাকাবাসী ও মিশন হাসপাতালের পক্ষ থেকে বাঁধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ অব্যহত রেখেছে রাসিক। তার ফলেই ব্যানার হাতে রাস্তায় দাড়িয়ে মানববন্ধন করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নার্সেরা।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ‘এই হাসপাতাল ১০০ বছরের পুরনো। এখানেই জন্ম নিয়েছেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। দয়া করে জন্মস্থানকে ভাগাড় বানাবেন না। এটা সম্মানজনক হবে না।’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা এখানে নার্স তৈরি করি। এই ডাস্টবিন আমাদের জন্যও সম্মানজনক নয়।’
তারা আরও বলেন , প্রথম দিন কাজে বাঁধা দেয়ার পর আমরা মনে করেছিলাম তাঁরা কাজ বন্ধ করবে। তা না হলে এই ভাগাড় স্বাস্থ্যকর অনন্ত আমাদের এটা নিশ্চিত করবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন সেটাও নিশ্চিত করেনি। তাঁরা আমাদের বোঝাতে পারেনি যে এটা অত্যাধুনিক। তাই আমরা এটির নির্মাণ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। তাঁরা আরও বলেন, বিশে^র কোন দেশে হাসপাতালের সামনে ভাগাড় হয় না। কিন্তু এখানে তিনতলা ভবনের সমান উঁচু ভাগাড় করা হচ্ছে। আমরাও এটা চাই না। আমরা সংখ্যালঘু বলে এখানে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা তা আমরা জানি না।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার মিশন হাসপাতালের পক্ষ থেকে এসটিএস নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সিটি মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার এবং রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতেও কাজ বন্ধ হয়নি। ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে।
ঠিকাদার মামুনুর রশীদ বাচ্চু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘কাজে এই সমস্যার কথা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যদি কাজ বন্ধ করতে বলে তাহলে বন্ধ করব।’
রাসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সজিবুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘জায়গাটি সিটি করপোরেশনের। সেখানে আগে থেকেই খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হতো। সমস্যা দূর করতেই এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে। এসটিএস থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে না। সারাদিন এখানে ময়লা মজুত করে রাতে ভাগাড়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.