রাজশাহীতে স্ত্রীর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্সের একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত রাজশাহীর নগরীর উপশহর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার বাদ জুমা নগরীর গোরহাঙ্গা গোরস্থানে স্ত্রী আখতারা বেগমের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানো হয়।
নিহত নজরুল ইসলাম নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা। বিমান দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী আক্তারা বেগমও নিহত হন। লাশ দেশে আসার পর গত মঙ্গলবার (২০ মার্চ) দাফন করা হয় আক্তারা বেগমকে। তবে লাশ শনাক্তে জটিলতার কারণে নেপাল থেকে নজরুল ইসলামের লাশ আসে বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বিকেলে।
এরপর লাশ প্রথমে তার পৈত্রিক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের বেগুনবাড়ী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় সেখানে নিহত নজরুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ রাজশাহী এনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গোরহাঙ্গা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজার নামাজে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খী, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় শোকাবহ হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। সবাই কফিন ছুঁয়ে শেষ বিদায় জানান তাকে।
জানাজার নামাজে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু প্রমুখ।
নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের লাশ গত ১৯ মার্চ দেশে আসে। এর পরে দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকলে নিহত নজরুল ইসলাম, অলিফউজ্জামান ও পিয়াস রায়ের লাশ দেশে আসে। বিমানবন্দরে দুই মেয়ে নজরুল ইসলামের লাশ গ্রহণ করে রাজশাহীর পথে রওনা হন।
নজরুল ইসলামের জামাতা অ্যাডভোকেট ইমরান আলী জানান, তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম ও শাশুড়ি আখতারা বেগম দম্পতি রাজশাহীর উপশহরের বাড়িতে থাকতেন। এছাড়া তার দুই মেয়ে ঢাকাতেই থাকেন। গত ২০ মার্চ আখতারা বেগমকে দাফনের দিন দুই মেয়ে বাড়িটিতে এসেছিলেন। পরে তারা আবার ঢাকায় চলে যান। নিহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তার স্ত্রী আখতারা বেগম রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি সম্প্রতি অবসরে যান।
স্বামীকে নিয়ে অবসর যাপনে নেপালে ঘুরতে যাচ্ছিলেন। নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার বন্ধু হাসান ইমাম ও তার স্ত্রী বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানুও ছিলেন। কিন্তু এই দুই বন্ধু তাদের স্ত্রীদের নিয়ে নেপালের মাটিতে পা রাখার আগেই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
এর মধ্যে হাসান ইমাম ও তার স্ত্রী বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানু রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাদের লাশ গত ১৯ মার্চ দেশে ফেরার পর ঢাকায় দাফন করা হয়।
গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলার ওই বিমানে রাজশাহীর তিন দম্পতিসহ মোট সাতজন ছিলেন। অন্য তিনজন হলেন- রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরানা কবির হাসি, তার স্বামী রকিবুল হাসান ও নগরীর নওদাপাড়া এলাকার গোলাম কিবরিয়ার নিউইয়র্ক প্রবাসী মেয়ে বিলকিস আরা মিতু। রাজশাহীর এই সাতজনের মধ্যে বেঁচে আছেন কেবল হাসি। সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসা চলছে। তবে হাসির বাম হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছে।
আর নিহত হাসান ইমাম, তার স্ত্রী বেগম হুরুন নাহার ওরফে বিলকিস বানু ও মিতুকে দাফন করা হয়েছে ঢাকায়। রকিবুলের লাশ দাফন করা হয়েছে তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭১ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১। এতে নিহত হন ৪৯ জন। তাদের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি। তাদের স্মরণে ১৫ মার্চ দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালিত হয়।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.