রাজশাহীতে বিপিসির কারসাজি অপর্যাপ্ত তেলে হুমকির মুখে লাখো কৃষক


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী ও নাটোরে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল সরবরাহ না হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছেন লক্ষাধিক কৃষক। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এখানকার এজেন্ট, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা।
রাজশাহীর জন্য বরাদ্দকৃত ডিজেল রহস্যজনকভাবে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তেল সরবরাহকারী তিন প্রতিষ্ঠান পদ্মা মেঘনা ও যমুনা অয়েল কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। ফলে বাধ্য হয়ে অন্য জায়গা থেকে তেল এনে চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ছেন ডিলাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর মোট ৪ লাখ ৭ হাজার কৃষকের বিপরীতে গভীর ও অগভীর নলকূপ সংখ্যা ৩৬ হাজার ১৫৪ টি। এরমধ্যে চালু রয়েছে ২৬ হাজার ৯৭৫ টি নলকূপ। জেলায় মোট ২০ হাজার ৯২৮ টি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত সেচ যন্ত্রের মধ্যে ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্র ১৯ হাজার ৭৫৭ টি।
সূত্র জানায়, গতবছর অগভীর নলকূপের আওতায় রাজশাহীর ৪৬ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। এতে প্রায় ৫৯ হাজার ২৭১ জন কৃষক কাঙ্খিত ফসল ফলাতে সক্ষম হন। সূত্র আরো জানায়, জেলার প্রায় ৩ হাজার গভীর নলকূপের মধ্যে ডিজেল চালিত ২৪৬ টি নলকূপ থেকে ৭৩০ জন কৃষক চাষাবাদ করে থাকেন।
তবে এ বছর তেল সরবরাহ না থাকায় এসব নলকূপ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে শীত মৌসূমে হুমকির মুখে পড়েছেন রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের সবজি চাষিসহ লক্ষাধিক কৃষক।
জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে খুলনা থেকে রাজশাহী ও নাটোর ডিপোতে ১ রেকে (৩০ ওয়াগন) ১০ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করা হতো। কিন্ত বর্তমানে সেটি ঠিকমতো সরবরাহ না করে পার্বতীপুর ডিপোতে পাঠানো হচ্ছে। অথচ পার্বতীপুরের জন্য ৪ টি রেক (১২০ ওয়াগন) বরাদ্দ রয়েছে। তবুও গত দুই মাস ধরে বিপিসি এখানকার তেল অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার জ¦ালানি ব্যবসায়ী ও শ্যালো ইঞ্জিন নির্ভর চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ও নাটোরে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ লিটার ডিজেল সরবরাহ হয়। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান ১০ লাখ লিটার করে এ জ¦ালানি সরবরাহ করে থাকে।
একবার রাজশাহীতে, পরেরবার নাটোরে। এভাবে সমন্বয় করে ডিজেল সরবরাহ করা হলেও এখন তা ঠিকমতো সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে না।
এজেন্ট, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, রহস্যজনক কারণে বিপিসি তাদের সাথে প্রতারণামূলক আচরণ করছেন। এ অঞ্চলে চাহিদা থাকার পরও ঠিকমতো সরবরাহ না হওয়ায় চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
তারা জানান, ৩০ ওয়াগন তেলই তাদের জন্য অপর্যাপ্ত। তেল সরবরাহের পরিমাণ না বাড়িয়ে উল্টো এই তেল অন্য ডিপোতে চলে যাচ্ছে। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
তবে তেলের ঘাটতিজনিত কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করেছে। যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটিডের কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, রাজশাহীর তেলবাহী ওয়াগন পার্বতীপুর যায় এটা সঠিক। তবে বিপিসি যেভাবে তেল সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেভাবেই সরবরাহ করতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে উত্তরাঞ্চল বিপিসির সাপ্লাই এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের এজিএম আনোয়ার হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তেলের ঘাটতি থাকায় ঠিকমতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষও এটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করছেন। তেলের সংকট কাটিয়ে শীঘ্রই চাহিদামতো ডিজেল সরবরাহ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি সাইদুর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.