রাজশাহীতে তিন দশক পর ‘ঢলন’ প্রথা আজ বিলুপ্ত

বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ডালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যেরও আড়ৎ আছে এখানে। এসব আড়তে চাষিরা তাদের আম বিক্রি করতে গেলে এক মণ আমের ওজন ধরা হতো ৪৬ কেজি। অন্যান্য কৃষিপণ্যের মণ হতো ৪২ কেজিতে। ৪০ কেজির অতিরিক্ত কৃষিপণ্যকে ধরা হতো ‘ঢলন’ হিসেবে।
আড়ৎদারেরা চাষিদের বুঝিয়ে ছিলেন কৃষিপণ্যের ওজন পরে কমে যায়। সে কারণে এই ঢলন দিতেই হবে। এভাবে বানেশ্বর বাজারে প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ঢলন প্রথা চলে আসছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন চাষিরা। তিন দশক পর অবশেষে সেই ঢলন প্রথা বিলুপ্ত হলো। এখন থেকে ৪০ কেজিতেই সব কৃষিপণ্যের এক মণ ওজন হবে। অতিরিক্ত কেউ নিতে পারবেন না।
গতকাল শুক্রবার (২৩শে অক্টোবর) ২০২০ ইং বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির কার্যালয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, চাষি, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামশুন নাহার ভুঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী সুলতান। সভায় স্থানীয় চাষি এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চাষিরা বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরেই তাদের এক মণে অতিরিক্ত কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। দিতে না চাইলে তার কৃষিপণ্য কেনা হয় না। তারা আড়ৎদারদের কাছে জিম্মি। প্রায় তিন দশক ধরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। তারা এই ‘ঢলন’ প্রথা বাতিলের দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা তাদের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। তবে তা টেকেনি। ইউএনও সিদ্ধান্ত দেন, এখন থেকে সব পণ্যের এক মণ হবে ৪০ কেজিতে। এর বেশি নেয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তিনি অল্পদিন আগেই পুঠিয়ায় যোগ দিয়েছেন। সেখানে গিয়েই চাষিদের কাছ থেকে এ বিষয়টি শোনেন। চাষিরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই এই সভার আয়োজন করা হয়।
ইউএনও জানান, সারাদেশে ৪০ কেজিতে এক মণ। ব্যতিক্রম ছিল বানেশ্বর বাজার। অথচ এই বাজারেই রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে। এখানে চাষিরা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছিলেন। এক মণের জন্য আমের ওজন নেয়া হতো ৪৬ কেজি। পেঁয়াজসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের এক মণ হতো ৪২ কেজিতে। সেই প্রথা বাতিল করা হলো। এখন থেকে সব পণ্যের এক মণ হবে ৪০ কেজিতে। এটি নিশ্চিত করতে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।
পুঠিয়ার একাধিক চাষিরা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ২০ বছর ধরে তিনারা বাগান ইজারা নিয়ে আমচাষ করেন। অন্যান্য কৃষিপণ্যও আবাদ করে আসছেন। তার কৃষিপণ্য কোনদিন ৪০ কেজিতে এক মণ ধরা হয়নি, ঢলন দিতেই হয়েছে। এতদিন পর ঢলন প্রথা বন্ধ হওয়ায় তাদের ভাল লাগছে।
বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য ওসমান আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকায় নেয়ার পথে কৃষিপণ্য পঁচে যায়। এ জন্য আমের ক্ষেত্রে ছয় কেজি এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য দুই কেজি বেশি নেয়া হতো। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে দাম একটু কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু এক মণ পণ্যের ওজন ৪০ কেজিই হবে। তারা সেটি মেনে চলবেন। শুক্রবার থেকেই এটি কার্যকর করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.