রাজশাহীতে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাইয়ে জঙ্গিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাই করছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি রাজশাহীতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পেয়েছে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা রাজশাহীতে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটনায় বলে র‌্যাব ৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘তাদের তৎপরতা আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনি রয়েছে। তবে তাদের তৎপরতার ধরনটা চেঞ্জ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অনেক জঙ্গি মারা যাওয়ায় তাদের সক্ষমতা কমে গেছে। এতে তারা এখন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বাদ দিয়ে ছদ্মবেশে সদস্য সংগ্রহ, অস্ত্রের ট্রেনিংয়ের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা ছিনতাই করে অর্থ সংগ্রহ করছে।

তবে জঙ্গিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। তাদের ধরার কাজে সাধারণ মানুষও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছে।’ র‌্যাব জানায়, ‘গত বছরের ৫ অক্টোবর দুপুরে রাজশাহী নগরের মতিহার থানার বাইপাস সড়কে ইটখোলা এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রহমান জুট মিলের সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। এছাড়াও ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর নগরের রাজপাড়া থানার ডাবতলায় গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪৪ লাখ টাকা ডিবি ও র‌্যাবের পোশাক পরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত ১০ আগস্ট কাপাশিয়ায় বিকাশ কর্মীকে গুলি করে ১২ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়। এছাড়াও রাজশাহী শহরেও আরো কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার ঘটে। এ সব ঘটনা ঘটিয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। র‌্যাবের সূত্রমতে, রাজশাহী অঞ্চলে আনসার আল ইসলামের ৩০ থেকে ৩৫ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তাদের এ সংগঠনে জেএমবি ও হিজবুত তাওহিদের সদস্যরাও যুক্ত হয়েছে।

এদের মধ্যে দুইজন এক সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর পোষক তৈরীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। তারা আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর পোষক তৈরী করে ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছে। আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গিরা এখন সরাসরি হামলার শক্তি হারিয়েছে। তবে তাদের তৎপরতা কমেনি। এখনও তারা ছদ্মবেশে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া জঙ্গিরা এখন দোকানদার-হকার, মিস্ত্রী, বাস-ট্রাকচালকের সহকারী সেজে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ঠেকাতে বাইরের লোকদের দলে না টেনে নানা ছদ্মবেশ নিয়ে থাকা জঙ্গিরা নিজেদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেই এখন জঙ্গিবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৫। এদের মধ্যে জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও হিজবুত তাওহিদের সদস্যরা রয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল রাজশাহীর চারঘাট থেকে বিদেশি পিস্তল ও জিহাদি বইসহ লোকমান হাকিম নামের এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তার কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও দুইটি জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানায়, ২০০২ সালে জেএমবিতে যোগদান করে রাজশাহী নগরীর বেলকুপুর থানার মাহেন্দ্রা গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে লোকমান হাকিম। এরপর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির একজন আঞ্চলিক নেতার অধীনে সে দলীয় সভা আয়োজন, উগ্রবাদী বই বিতরণ, ইয়ানতের টাকা আদায়, জিহাদি দাওয়াত ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া শুরু করে।

পরবর্তী সময়ে সে রাজশাহী জেলার পবা এলাকার জেএমবি নেতা মোজাম্মেল হক ওরফে মোজার বাড়িতে দলীয় সভায় অংশগ্রহণ করে। ওই সভা থেকে মোজাসহ সংগঠনের ১২ সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও লোকমান হাকিম ও আরও কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে লোকমান হাকিম টিউবওয়েলের মিস্ত্রির ছদ্মবেশে সহযোগী সদস্যদের নিয়ে সংগঠনের কাজে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত শুরু করে।

ছদ্মবেশে সে সংগঠনের পক্ষ থেকে ইসলামি দাওয়াত দেওয়াসহ জেএমবির নতুন সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে। র‌্যাব জানায়, নগরীর মতিহারের জোকাবিলে লোকমান হাকিম শারীরিক ও অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণ নেয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। শুধু লোকমান নয়, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরাও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ছদ্মবেশ নিয়ে এখন তারা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.