রংমিস্ত্রি’র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই ছেলে,পড়েন জাবি-ঢাবিতে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: প্রতিবন্ধকতা মানেই অক্ষমতা নয়থ। তার সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, পঞ্চগড়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই ভাই সেলিম ইসলাম (২২) ও রাইসুল ইসলাম (২১)। শৈশবেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও দমে যাননি তারা।
অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে চলছেন স্বপ্ন জয় করতে। সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দুই ভাই পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেলিম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইতিহাসথ বিভাগে আর রাইসুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সমাজ বিজ্ঞানথ বিভাগে অধ্যয়ণ করছেন। দুজনেই ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারের এই দুই ভাই ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হয়ে শিক্ষক হতে চান। দায়িত্ব নিতে চান বাবা-মাথর অভাবের সংসারের।
সেলিম ও রাইসুলের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।
তারা ওই এলাকার রং মিস্ত্রি শহিদুল ইসলামের ছেলে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সেলিম ও তৃতীয় রাইসুল। সেলিম তৃতীয় শ্রেণিতে আর রাইসুল প্রথম শ্রেণিতে পড়াকালীন দৃষ্টিশক্তি হারান।
কথা হয় সেলিম ও রাইসুলের সাথে। তারা জানান, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ঘরবন্দি ছিলেন এক বছর। পড়ালেখা থেকে দুরে থেকে বিরক্তিবোধ করছিলেন তারা। পরে এক পরিচিতজনের মাধ্যমে পঞ্চগড় সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমে যোগাযোগ করেন।
পরবর্তীতে পঞ্চগড়ের কমলাপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে জেএসসি ও ২০১৬ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে দুজনেরই রেজাল্ট ছিলো জিপিএ- ৫। তবে এই অর্জন মোটেও সহজ ছিলোনা। পারি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই উতরাই। বঞ্চিত ছিলেন সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও।
তারা জানান, বন্ধুদের কাছে পাঠ্যবইয়ের পড়া রেকর্ড করে নিতে হতো তাদের। পরে সেগুলো শুনে শুনে মুখস্থ করে শ্রুতিলিখন পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণকালীন কোন প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় কি-না এমন প্রশ্নে তারা বলেন, ‘মূল প্রতিবন্ধকতা হলো হল থেকে ক্লাসে যেতে হলে রিক্সা অথবা বন্ধুদের সহযোগিতা নিতে হয়। অনেক সময় রিক্সা এবং বন্ধু কাউকেই না পেলে ক্লাসে যাওয়া হয়না। আর পরীক্ষার সময় শ্রুতিলেখক পাওয়া যায়না। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যাতো রয়েছে। অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।থ
তারা আরো বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা পাইনা। অন্যান্য জিপিএ- ৫ প্রাপ্তরা যেমন সুবিধা পায় আমাদেরও তেমনি। এদিয়েই চালিয়ে নিতে হয় আমাদের।থ
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় প্রায় এক বছর ধরে বাবা-মাথর সাথে মির্জাপুর গ্রামে অবস্থান করছেন সেলিম-রাইসুল। এতে মোটেও আনন্দিত নন তারা। বরং নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পিছিয়ে যাচ্ছেন লেখা পড়াতেও। তারা বলছেন, সময় থেমে নেই অথচ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনেক পরীক্ষা আটকে রয়েছে। কবে এগুলোর সমাধান হবে এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এখন অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। অনেক সময় ক্লাস বুঝিনা, গ্রামে নেটওয়ার্ক সংযোগ দূর্বল থাকে এতে অনেক ক্লাস করা যায়না।
সেলিম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন থেকে বাড়িতে অবস্থান করছি এতে বিরক্তিবোধ করছি। আমাদের পড়ালেখার ধারাবাহিকতা থমকে রয়েছে। যেখানে সবকিছুই স্বাভাবিক মত চলছে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা জানা নেই।
সমাজে অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছে যারা লেখাপড়া করতে পারেনা তাদের প্রতি আপনাদের বক্তব্য কি? এমন প্রশ্নে রাইসুল বলেন, ‘আসলে ছোট বেলায় এদেরকে ‘ভালো করবেথ এমন সাপোর্ট দেয়া হয়না। যেহেতু ছোট বেলায় কেউ নিজে থেকে কিছু বুঝেনা। সে ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের সাপোর্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মত যারা রয়েছে তাদেরকে যদি বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের লোকজন উৎসাহ দেয় তাহলেই সম্ভব।থ
রাইসুল আরো বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের চলার পথ মসৃণ নয়। পুরো পথই প্রতিবন্ধকতায় ভরপুর। ‘তোমরা লেখাপড়া করে কি করবা, কতটুকু সফল হবাথ এমন কথাও শুনতে হয়েছে। তবে এখন সবদিক থেকে সাপোর্ট পাচ্ছি যেটা শুরুতে পাইনি। আমাদের সবচেয়ে বড় সাপোর্ট আমাদের বাবা-মা।
সেলিম-রাইসুলের বাবা শহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘অনেক কষ্টে সংসার চলে। আমার একার উপার্জনে চার সন্তানের লেখা পড়ার খরচ যোগাতে হয়। অনেক সময় হিমশিম খেতে হয় আমাকে। এভাবেই সেলিম-রাইসুল এ পর্যন্ত এসছে। যদি কোন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে আমার জন্য সহজ হতো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর পঞ্চগড় প্রতিনিধি শেখ সম্রাট হোসাইন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.