রংপুর হাসপাতালে ১৫টি বেড ফাঁকা ও প্রধান ফটকে লেখা ‘আইসিইউতে কোনো বেড ফাঁকা নাই’

রংপুর প্রতিনিধি: রংপুর বিভাগবাসীর জন্য করোনার একটিমাত্র হাসপাতাল রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য, এখন শুধু মাত্র ১৫টি বেড ফাঁকা আছে তবে, হাসপাতালটির ‘আইসিইউতে’ কোন বেড ফাঁকা নেই। কিন্তু সীমান্তবর্তী এই বিভাগেই হুহু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. নুরুননবী, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে করোনা হাসপাতালের বেড সম্পর্কিত তথ্য,অতিরিক্ত করোনা রোগীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা, রোগী ভর্তিসহ দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান। 
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন- ‘১০০ শয্যা (৮টি আইসিইউ শয্যাসহ) বিশিষ্ট রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে আজ ৮৫ জন রোগী ভর্তি আছে। দৈনিক গড়ে ১২ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে, ভর্তির প্রবাহ না কমলে, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে রোগী ভর্তি করানোর মত কোন শয্যা খালী থাকবেনা।
সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি  অনুরোধ করছি খুব দ্রুত রোগী ভর্তির বিকল্প ব্যবস্থ্যা করার জন্য। লকডাউন সফল করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুনঃ করোনা প্রতিরোধে অবদান রাখুন, ‘প্রিয়জনদের অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন’।
এর এক ঘন্টা পর করোনা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক  ডা. নুর-ই-সাবা আশা। সেও তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে অতিরিক্ত করোনা রোগীভর্তি সংশ্লিষ্ট একটি পোস্ট দেন -সেখানে তিনি লেখেন-”জুলাই তো সবে শুরু !
আজ এমন অবস্থা রোগী ভর্তি নেবার মতো আর সামর্থ্য নেই। সিটি কর্পোরেশনের আওতায় কোভিড পজিটিভ  রোগীদের টেলিমেডিসিনে এমন রোগীদের বাসায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে যাদের আগে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করাতাম। বিশেষ করে যাদের কো-মরবিডিটি আছে তাদের।এবার বাসাতেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে,পরীক্ষা করিয়ে হোয়াটসআপ, মেসেঞ্জারে রিপোর্ট দেখছি।’
তিনি আরও লেখেন-‘এই মুহুর্তে আমার টেলিমেডিসিন রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০। তার মধ্যে ৮-১০ জনের হাসপাতালে ভর্তির indication আছে। অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন,কারো পরিবারে ডাক্তার আছে বা বাসাতেই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ স্যারের পরামর্শ নিচ্ছেন। আমার মতো ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের ৩৫-৪০ জন চিকিৎসক  টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। যারা হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন ডিউটি শেষে।
হাসপাতাল ১০০ শয্যা হলেও আমাদের অক্সিজেন পোর্ট কিন্তু ১০০ নয়। আরও HFNC প্রয়োজন। তাছাড়া Suspacted রোগীগুলো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে। তারপরেও আমাদের হাসপাতালের এই অবস্থা। চিকিৎসক, নার্স এবং ডেডিকেটেড  ওয়ার্ডবয়, ক্লিনারের অপ্রতুলতা রয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ এখানকার প্রত্যেক চিকিৎসকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’
রাতে সংশ্লিষ্ট এসব বিষয় নিয়ে, রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালটির তত্বাবধায়ক ডা. নুরুননবী সঙ্গে কথা হলে, তিনি বিটিসি নিউজকে জানান-‘দ্রুত বিকল্প ভাবে করোনা রোগী ভর্তির ব্যবস্থাসহ সর্বোপরি উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। ব্যাপক সরঞ্জামাদি, চিকিৎসক ও কর্মী বাড়ানো, না গেলে,সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।’ তবে সবচেয়ে সংকট রয়েছে জনবলের যেমন:- চিকিৎসক, নার্স এবং ডেডিকেটেড ওয়ার্ডবয় ও ক্লিনারের।
আবার,এরই মধ্যে হাসপাতালটির প্রবেশদারের প্রধান ফটকের সামনে সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে দিয়ে লেখা হয়েছে ‘আইসিইউতে কোনো বেড ফাঁকা নাই’।
সিমান্তবর্তি এই বিভাগে গত কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলছে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আবার সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)নেয়া দ্রুত প্রয়োজন, এমন করোনা রোগীর সংখ্যাও।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের,পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, রংপুর বিভাগে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের উপরে। এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগে ৫৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে আর সনাক্ত হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার ১৬০ করোনারোগী।
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মুমূর্ষ রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। অনেক রোগী রমেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তবে ‘আইসিইউ’ বেডের সংকটের কারণেই কোথাও কোথাও করোনা চিকিৎসা দিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ‘আইসিইউ’ বেড সংখ্যা বাড়ানোসহ করোনা রোগীদের চিকিৎসার সবধরনের সুযোগ সুবিধার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ভাবে জানিয়েছি।
স্বাস্থ্যঅধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী- রংপুর করোনা হাসপাতালে ৫০ টি এবং দিনাজপুর মেডিক্যালের করোনা কর্নারে ৩০টি ‘আইসিইউ’ বেড বাড়ানোর কথা থাকলেও তা গত একবছরেও হয়নি বরং রংপুর বিভাগে মাত্র ১৮ টি বেড আছে করোনার আইসিইউ রোগীদের জন্য।
অন্যদিকে,রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে- রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল গুলোতে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এখানে যে ভেন্টিলেটর সুবিধাসংবলিত যে ৮ টি বেড আছে,তার সবগুলোই পূর্ন এখন। এই হাসাপাতালে ১০০ টি বেডের মধ্যে ৮৫ টি বেড পূর্ন। তাদের মধ্যেই অন্তত ১-২০ জনকে আইসিইউ তে নেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও ”রমেকে” আইসিইউ শয্যা রয়েছে- মাত্র ২০টি। কিন্তু সেখানে অন্যান্য মুমুর্ষ রোগিদের নেয়া হয়। এছাড়াও এ বিভাগের দিনাজপুর”এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে”র একটি অংশে ৮টি আইসিইউ শয্যা নিয়ে করোনা চিকিৎসা চলছে।
এই অবস্থায় রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সরকারের কাছে দ্রুত রংপুর বিভাগে আলাদা করোনা হাসপাতাল তৈরির দাবি জানিয়ে বলেছেন- জরুরী ভিত্তিতে সেটি করতে হবে আর সময় নেই। অন্তত ২০০ আইসিইউ বেড নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে করোনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, অন্তত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা না যায়।
এদিকে, রংপুর করোনা হাসপাতাল ও রমেকের একটি সূত্রে জানাযায়, সদ্য করোনা হাসপাতালটি মূলত ছিল শিশু হাসপাতাল। সেখানে সব বেডেই অক্সিজেন পোর্ট নেই। সে কারণে সেখানে আর নতুন করে বেড বাড়ানো সম্ভব নয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর প্রতিনিধি এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.