রংপুর ডিসি অফিস থেকে ভূয়া লাইসেন্স গ্রহনকারী ৬০ জনের আদালতে আত্মসমর্পন : জামিন না মঞ্জুর

রংপুর ব্যুরো: রংপুর ডিসি অফিসের জিএম শাখা থেকে জেলা প্রশাসকের সই জাল, ভূয়া পুলিশ ভেরিফিকেশন দিয়ে ব্যাকডেটে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে চারশ অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের নজিরবিহীন ঘটনায় চার্জশিটভূক্ত ৬০ ভূয়া অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহনকারীর জামিন প্রার্থনা না মঞ্জুর করেছে আদালত। আজ বৃহস্পতিবার রংপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করেছিলেন তারা।

রংপুর আদালতের সিএসআই রেজাউল করিম রেজা বিটিসি নিউজকে জানান, স্বস্ব আইনজীবির মাধ্যমে দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই অস্ত্র মামলায় রংপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬০ ব্যক্তি। যারা অর্থের বিনিময়ে ওই ভূয়া অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন। বিকেল চারটায় আদালতের বিচারক রাশেদা সুলতানা শুনানী শেষে তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তারা হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তিকালনি জামিনে ছিলেন। জামিন না মঞ্জুর হওয়াদেও সবাই সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সামরিক আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।

রংপুর জজ আদালাতের পিপি আব্দুল মালেক বিটিসি নিউজকে জানান, ডিসি অফিসের অফিস সহকারী সামসুল ইসলামসহ অপরাপর আসামীরা বেসরকারী আগ্নেয়াস্ত লাইসেন্স সংক্রান্ত সঠিক হিসা গোপন করে, আগ্নেয়াস্ত্রের রেজিষ্টার গরমিল,অবৈধভাবে লাইসে¯œ প্রস্তুত,অস্ত্র রাখার যোগ্যতাসম্পন্ন নয় এরুপ ব্যক্তির নিকট লাইসেন্স সরবরাহের ফলে অ¯্রধারীগন অবৈধভাবে অস্ত্র কয় কওে নিজ দখলে রেখে অবৈধ অস্ত্র গ্রহনে জড়িত হয়, এবং তা অবৈধভাবে নবায়ন করে ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইন (সংশোধিত ২০০২ এর ২২/১৯(ছ)/৫/১৯-(ক)/১৯(চ) ধারায় অভিযুক্ত।

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ১৮ মে রংপুর ডিসি অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সামসুল ইসলামকে (৪৮) সহ বিভিন্নজনের নামে ব্যাকডেটে ডিসির সই জাল করে, ভূয়া পুলিশ ভেরিফিকেশন দেখিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানের মানুষের নামে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার অভিযোগে ওই দিনই রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস বাদি হয়ে সামসুল আলম ও পিন্টুর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন এবং সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ক আইনে দুটি পৃথক মামলা করেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য মামলা হয় দুদকে। গত ১৮ মে তার অফিসে অভিযান চালিয়ে সামসুলের আলমিরা থেকে ১৫টি ভূয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স, ১৫ টি ভূয়া লাইসেন্সের ভলিউম, ৭ লাখ নগদ টাকা, ১১ লাখ টাকার এফডিআর ও ২  লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ওই দিনই ডিসি অফিসের জিএম শাখার সকল কাগজপত্র তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করে দেয় জেলা প্রশাসন এবং অভিযুক্ত অফিস সহকারী সামসুল আলম ও পিয়ন পিন্টুকে বরখাস্ত করা হয়। ওইদিনই তিনি কৌশলে পালিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন সামসুল। পরে ওই বছর ৫ জুলাই রাতে ঘটনা প্রকাশের ৫৯ দিন পর রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে র‌্যাব-১৩ একটি দল র‌্যাব-২ ও র‌্যাবের প্রধান শাখার গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় সামসুল আলমকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর সামসুলকে আদালতের মাধ্যমে ৭ জুলাই ৫ দিনের রিমান্ডে এবং ১১ জুলাই দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেয় দুদক।

গত ১৩ জুলাই রংপুর কোতয়ালী থানায় তার নামে অস্ত্র আইনে মামলা করেন এসআই মামুন। এরপর সামসুল ১৪ জুলাই আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। এছাড়াও রিমান্ডে তিনি এই চাঞ্চল্যকর ভূয়া অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন। ওই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর সামসুলের প্রধান সহযোগি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার চর বানিয়াকৈর এলাকার হায়েত আলীর পুত্র আব্দুল মজিদকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। মজিদ সেনাবহিনীর ল্যান্স করপোরাল হিসেবে চাকরি থেকে অবসরগ্রহনের পর এলিট ফোর্স নামের একটি বেসরকারী সিকিউরিটি এজেন্সিতে চাকুরি করতো।  সেখান থেকেই সামসুলের সাথে একাট্রা হয়ে ডিসি রংপুর ডিসি অফিস থেকে অবৈধভাবে ভূয়া অস্ত্রের লাইসেন্সের বাণিজ্য করতো। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ২৮১ জনের নামে চার্জশিট দেয়া হয়।

এরপর  ভুয়া লাইসেন্স দেয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারের কাজ শুরু করে দুদক। ওই বছর ৩, ৭, ৮ ও ৯ আগষ্ট চার দফায় ৫৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬১৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। এসব অস্ত্র রাজশাহী, দিনাজপুর ও ঢাকা থেকে কেনা হয়েছে এবং অধিকাংশই তুরস্কের। অস্ত্র ও গুলি ছাড়াও তাদের কাছে থাকা লাইসেন্সের কপিসহ অস্ত্র কেনার কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে। রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে অস্ত্র ও গুলি গুলো  ডিসি অফিসের ট্রেজারিতে জমা দেয়া হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.