রংপুরে ২৬ মাসেও দেয়নি, ইউপি সদস্যদের সম্মানিভাতা-বেতগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান

রংপুর প্রতিনিধি: রংপুর গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের ২৬ মাস থেকে বকেয়া ও সম্মানিভাতা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হলেও, এখন পর্যন্ত সম্মানিভাতা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে- ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান প্রামাণিক এর বিরুদ্ধে।
রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ০১ নং বেতগাড়ী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের সম্মানিভাতা নির্দেশ প্রদান করা হয় গত ৩০ শে জুন। নির্দেশ প্রদান করা হলেও সম্মানিভাতা দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্যরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকেলে বেতগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ মাস থেকে ১২ জন ইউপি সদস্যকে কোনো প্রকার বকেয়া ও সম্মানিভাতা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ৯ নং ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের কথা বলে চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান প্রামাণিক ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩ শ ৫০ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের কাছে সম্মানিভাতা চাইতে গেলে, আমাদের বলেন টাকা তুলবোও না দেবোও না। ২৬ মাসের সম্মানিভাতা কিভাবে নেয় সেটা আমি দেখবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, বেতগাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত বেতগাড়ী হাটটি গংগাচড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট। ১৪২৮ বাংলা সনে ৩,৩৭,০৭০০০ /-(তিন কোটি সাইত্রিশ লাখ ৭ হাজার) টাকা ইজারা দেয়া হয়। ওই ইজারা মূল্যে ৫ % হিসেবে গত ৬ জুন ১৭,৩৫,৩৫০ টাকার চেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ‘ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান প্রামাণিককে প্রদান করেন এবং ইউপি সদস্যদের বকেয়াসহ সম্মানিভাতা পরিষদ করে মাস্টার রোলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ও জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানোর জন্য বলা হয়।
এ নির্দেশনার পরও সম্মানিভাতা দেয়া হয়নি বলে জানান, ইউপি সদস্যরা। ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান প্রামাণিক ১২ জন ইউপি সদস্যদের ২৬ মাসের সম্মানিভাতা মোট ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৮ শ টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইউপি সদস্য বাবলু মিয়া বলেন, করোনাকালীন সম্মানিভাতা বকেয়া রেখে আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে এবং অনেক গরিব ইউপি সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চেয়ারম্যান আমাদের বলেছেন, ১২ জন মেম্বারের সম্মানিভাতা দিয়ে উন্নয়ন করবো!তাহলে আমাদের কী হবে?আমরা এর বিচার চাই।
ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান প্রামাণিকের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের সম্মানিভাতা বকেয়া রয়েছে। গংগাচড়া উপজেলার সকল ইউনিয়নের নিজস্ব আয় ওই আয়ের সমপরিমাণ নয়, অথচ তাদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সম্মানিভাতার টাকা বকেয়া নেই। আমাদের বকেয়া সম্মানিভাতা না দিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে চেয়ারম্যান ১৭,৩৫,৩৫০ টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সময়কাল প্রায় অতিক্রম হতে চলছে ২ বছর ২ মাস যাবৎ। আমাদের ইউপি অংশের সম্মানিভাতা বকেয়া রেখেছেন চেয়ারম্যান
এ ব্যাপারে ইউপি সচিব আনিছুর রহমান সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ডিসি অফিস থেকে গত ৪ জুলাই চিঠি পেয়েছি। তবে চেয়ারম্যানকেও ৫ জুলাই চিঠি দেয়া হলেও, কোনো সদুত্তর আজও পর্যন্ত মেলেনি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান প্রামাণিক এর সঙ্গে  প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি, বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং এ প্রসঙ্গে কোনো প্রকার মন্তব্য করতে নারাজ তিনি। আমি তাদের টাকা দেবো কেন? হাট ইজারা মূল্যে ৫% হিসেবে ১৭,৩৫,৩৫০ টকা দিয়ে উন্নয়নের কাজ করা হবে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি তদন্ত সাপেক্ষে যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আমি টাকা দেবো। তদন্ত টিম যদি আসে তাহলে আইন দেখাবো, পেপাস দেখাবো, তারপর তদন্ত টিম যদি বলে আমাকে টাকা দিতে তবেই আমি তাদের টাকা দেবো।
এ বিষয়ে গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম দুঃখ প্রকাশ করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যানকে ইউপি সদস্যদের বকেয়াসহ সম্মানিভাতা প্রদানের জন্য চেক এবং চিঠি দিয়েছি। ডিসি স্যার চেয়ারম্যানকেও চিঠি দিয়েছে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সম্মানিভাতা পরিশোধের জন্য।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর প্রতিনিধি এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.