রংপুরে ভাসুরের স্ত্রীর দেয়া গরম পানিতে ঝলসে গেছে গৃহবধুর পুরো শরীর

রংপুর ব্যুরো: গাছ কর্তন করতে বাঁধা দেয়ার জেরে রংপুরের গংগাচড়ায় লক্ষিটারী ইউনিয়নের পুর্ব মান্দ্রাইন গ্রামে নিজ ভাসুরের স্ত্রীর দেয়া গরম পানিতে ঝলসে গেছে সাবিনা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধুর পুরো শরীর। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিত্সাধীন ওই গৃহবধুর মুখের আকৃতি বআর আগের মতো ফেরানো যাবে না, তার জীবন এখন সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিত্সক। এ ঘটনায় মামলা হলেও ৮ দিনেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিত্সাধীন সাবিনা বেগমের স্বামী গোলাম রব্বানী জানান, গত ১১ জুন সকালে আমার বসত ভিটায় লাগানো বেশ কিছু বিভিন্ন ধরনের গাছ আমার ভাই তরিক মিয়া ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম ওরফে ময়না বুড়ি কেটে ফেলে। এসময় আমার স্ত্রী সাবিনা বেগম তাদের বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা দুজনই সেখানে থাকা বাঁশ দিয়ে আমার স্ত্রীর শরীরে উপুর্যপুরি মারতে থাকে। পিটুনির চোটে মাটিতে পড়ে যায় আমার স্ত্রী।  এসময় আমার ভাবী আমেনা বেগম বাড়িতে গিয়ে চুলায় থাকা ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে মরিচের গুড়ো মিশিয়ে নিয়ে এসে আমার স্ত্রীর মুখে ও বুকে নিক্ষেপ করে। এতে আমার স্ত্রী সাবিনার পুরো মুখ ও বুক দগ্ধ ঝলসে যায়। শুধু তাই নয়, গরম পানি নিক্ষেপের পর আমার স্ত্রীকে তারা গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করে। স্ত্রী ও আমার চিত্কার শুনে এলাকাবাসি ছুটে আসলে আমার ভাই ও ভাবী পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আমি এলাকাবাসির সহযোগিতায় স্ত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে হাসাপাতালে বার্ণ ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিটের নিচ তলার ৩৭ নং ওয়ার্ডের ৪নং বেডে চিকিত্সাধীন আছেন গৃহবধু সাবিনা বেগম। তার মুখ ঝলসে গেছে। মুখের কোন আকৃতি নেই। তার বেডের পাশে অসহায়ের মতো পানি ঝড়াচ্ছে তার ১০ বছরে কন্যা রিতু মনি, স্বামী এবং ভাই সাইদ মিয়া।

সাবিনা বেগমের কন্যা রিতু মনি বিটিসি নিউজকে জানান, আমার মাকে আমার চাচী ময়না বুড়ি আমার সামনে মরিচ মিশানো গরম পানি মুখে ও বুকে ঢেলে দেয়। আমার মা তখন খুব জোড়ে চিত্কার দেয়। এখন আমার মায়ের মুখ আর মুখ নাই। খুব কস্ট হচ্ছে আমার।

সাবিনার ভাই সাইদ মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি নিজেই এক শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় পরিবারের বোঝা হয়ে আছি। এখন আমার সুস্থ্য বোনকে আমেনা বেগম যেভাবে গরম পানি নিয়ে মুখ ও বুক ঝলসে দিলো। তার আর আকৃতি আগের মতো থাকবে না। বোনটার দুটি ছোট ছোট মেয়ে আছে। তাদের মুখে দিকে তাকাতে পারছি না। কিভাবে এই কস্ট লাঘব করবো। মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কিভাবে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম মারুফ বিটিসি নিউজকে জানান, সাবিনার শরীরের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে। তাকে সুস্থ্য করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে তার মুখের অবস্থা আগের মত ফিরানো যাবে না।

সাবিনার স্বামী গোলাম রব্বানী আরও জানান, বিষয়টি জানিয়ে থানায় আমি সেদিনই মামলা করেছি। আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কাউকেই গ্রেফতার করছে না পুলিশ। আমার টাকা পয়সা নাই। সেজন্য কোথাও গিয়ে বিচার পাচ্ছি না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া মডেল থানার এসআই তদন্তকারী আবু বকর ফকরুল আলম বিটিসি নিউজকে জানান, ঘটনাটি আমাদের কাছে আসার সাথে সাথেই মামলা নেয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত করছি। আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

গংগাচড়া থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার বিটিসি নিউজকে জানান, মরিচ মেশানো গরম পানি মুখে ও বুকে নিক্ষেপ করে জঘন্য অপরাধ করেছেন অভিযুক্তরা। তারা যেখানেই থাকুক তাদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। এখানে যত রাঘোব বোয়াল থাকুক না কেন তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।

এ ব্যপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বিটিসি নিউজকে জানান, এতবড় একটি ঘটনা। কিন্তু পুলিশ এখনও আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারার বিষয়টি খুব দুঃখজনক। গ্রেফতার না হওয়ার পেছনে অন্য কোন কারণ থাকলে তা উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা জরুরী। এছাড়াও তিনি গৃহবধুর সুচিকিৎসা প্রয়োজনে ঢাকা কিংবা বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সার উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.