রংপুরে নারীসহ চট্রগ্রামের এএসপি আটক : অতঃপর বিয়ে, জেলা মহিলা পরিষদের সহযোগিতায় ভূক্তভোগির ঠিকানা হলো স্বামীর ঘরে

রংপুর ব্যুরো: চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এপিবিএন এ কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কামরুল হাসানকে এক তরুনীসহ জেলা মহিলা পরিষদের সহযোগিতায় রংপুর মহানগরীর বনানী পাড়ার এক বাড়ি থেকে আটক করে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানা পুলিশ। এরপর গভীর রাতে তাদের ৫১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

আরপিএমপি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ বিটিসি নিউজকে জানান, রংপুর জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের একটি দল গতকাল মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এপিবিএন এ কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কামরুল হাসানকে নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের বনানী পাড়ার একটি বাড়ি থেকে কারমাইকেল কলেজের এক ছাত্রীসহ আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা যায় তারা স্বামী স্ত্রী। তারপর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

তবে জেলা মহিলা পরিষদ, পারিবারিক ও পুলিশ নিশ্চিত করেছে, থানায় আটকের পর গভীর রাতে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যস্থ্যতায় উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে কাজী ডেকে থানার পাশে হোটেল তিলোত্তমঅয় তাদের বিয়ে দেয়া হয়। তবে কাজীর খাতায় রেজিস্ট্রি করা হয় ২১ অক্টোবরের ব্যাক ডেটে।

রংপুর জেলা মহিলা পরিষদ রংপুরের সম্পাদিকা রোমানা জামান বিটিসি নিউজকে বলেন, রংপুরের মিঠাপুকুরের বালারহাটের মৃত তোফাজ্জল হোসেন ও মাতা আয়েশা বেগমের কন্যা ২০১৫ সালে কারমাইকেল কলেজে থেকে ইংরেজি বিভাগ থেকে পাশ করা তরুনী রোকসানা পারভীন স্মৃতি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করে জানান, স্মৃতির সাথে একবছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জের উপজেলার পশ্চিম দলিরামপুর মাগুড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন ও মাতা কহিনুর বেগমের পুত্র চট্রগাম জেলা পুলিশের এপিবিএন এ কর্মরত এএসপি কামরুল হাসানের। এরপর ওই পুলিশ কর্মকর্তা স্মৃতির সাথে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। শুরুতেই সিওবাজার সরদারপাড়া এলাকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্মৃতির সাথে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকা শুরু করে। ওই বাসার মালিক বিষয়টি টের পেয়ে সাত দিন পরই ওই তাদের বের করে দেয়। এরপর তিনমাস আগে বনানীপাড়ার সিদ্দিক হোসেনের বাড়ির দোতালার ফ্লাট সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। এসময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাড়ির মালিককে বলে আমার স্ত্রী এখানে থাকবে। আমি বাইরে চাকরি করি। মাঝে মাঝে আসবো। এভাবে রাজশাহীতে ট্রেনিং থাকা অবস্থায় ওই বাসায় এসে স্মৃতির সাথে থাকতো ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরই মধ্যে স্মৃতি বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি বিভিন্ন কৌশলে এড়িয়ে যেতেন। পরে মেয়েটি আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করে এর প্রতিকার চান।

মহিলা নেত্রী রোমানা আরও বিটিসি নিউজকে জানান, ট্রেনিং শেষে ১২ দিনের ছুটি কাটাতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা মঙ্গলবার বনানীপাড়ার ওই বাসায় আসেন। এরপর তার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। এসময় বাসায় স্মৃতি তাকে বিয়ের কথা বললে ৬ মাস পর বিয়ে করার কথা জানায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার। পরে স্মৃতি বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে আমাদের খবর দেয়। পরে এলাকাবাসির সহযোগিতায় মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজের পর বনানীপাড়া থেকে মেয়েটিসহ ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর বিভিন্নভাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা থানা থেকে বের হওয়ার চেস্টা করে। কিন্তু মেয়েটি বিয়ের দাবিতে অনড় থাকায় অবশেষে পুলিশ কর্মকর্তা বিয়েতে সম্মত হয়। এরপর পুলিশের মধ্যস্থতায় মঙ্গলবার রাত তিনটায়  হোটেল তিলোত্তমায় পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫১ লাখ ১ হাজার ৫৩ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে দেয়া হয়। তবে কাবিননামায় ২১ অক্টোবরের তারিখে রেজিষ্ট্রি করানো হয়। তিনি জানান, বিয়ে পড়ানোর সময় আমাদের কোন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে আমরা একটি নারীর অসহায় মুহুর্তে তাকে সহযোগিতা করেছি। এভাবে মহিলা পরিষদ অসহায় নারীদের পাশে আছে এবং থাকবে।

এ ব্যপারে রোকসানা পারভীন স্মৃতি বিটিসি নিউজকে জানান, আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার পর বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আমার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু আমাকে বিয়ে করছিলেন না। এক পর্যায়ে আমি মহিলা সমিতির স্মরণাপন্ন হলে তাদের সহযোগিতায় আমাদেরকে একটি বাসা থেকে থানায় আনা হয়। এবং আমাদেরকে বিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, আমাকে যেন স্ত্রীর মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়, সেটা আমি চাই। যাতে আমি আর কোনভাবে প্রতারিত না হই।

এ ব্যপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার( মিডিয়া ) আলতাফ হোসেন বিটিসি নিউজকে জানান, বিষয়টি থানা অবহিত। এর বেশি কিছু বলতে চান নি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.