খুলনা ব্যুরো : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, রংপুরের চেয়েও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভাল হবে। এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এ পর্যন্ত যে আচরণ পাওয়া গেছে তা সন্তোষজনক উল্লেখ করে এটিকে ১৫ মে’র নির্বাচন পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য সব প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি আহবান জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রত্যাশা যেন হতাশায় পরিণত না হয়। তিনি রোববার বিকেলে নগরীর বয়রাস্থ খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ মিলনায়তনে কেসিসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
সভায় সিইসি বলেন, শনিবার তিনি খুলনা এসে নগরীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর আছে বলে তার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি যাতে ১৫ মে পর্যন্ত সমুন্বত থাকে সে প্রত্যাশাও করেন তিনি। কোন কারনে যেন নির্বাচন সংঘাতে পরিণত না হয় সে আশাবাদও ব্যক্ত করেন সিইসি।
ভোট গননা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোট গননা শেষে প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত একটি কপি প্রার্থীর এজেন্টের কাছে দিতে হবে। যে কেন্দ্রের ফলাফল সে কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হবে। একটি কপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে হাতে হাতে পৌছাবেন প্রিজাইডিং অফিসার আর একটি কপি রিটার্নিং অফিসার বরাবর পাঠানো হবে ডাকযোগে।
এসব ব্যাপারে এজেন্টদের যে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে সেটি নতুন মাত্রা। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদেরও। এ নির্বাচনকে শিক্ষনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা নিয়েই জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োগ করা হবে। এখানে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এটিই তার প্রত্যাশা।
নির্বাচনের পরিবেশ যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য অস্ত্রধারী, মামলার আসামী এবং বহিরাগতরা যাতে শহরে প্রবেশ করতে না সেজন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেন তিনি উল্লেখ করেন। বৈধ অস্ত্রও নির্বাচনের সময় বহন করা যাবে না। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, খুলনা একটি ঐতিহ্যবাহী শহর।
এখানে এ পর্যন্ত আচরণবিধি সন্তোষজনক দেখা গেছে। প্রার্থীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ আচরণ বহাল আছে। সকালের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সবাই আশ্বস্ত করেছেন যে, কেসিসি নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন এবং লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড যাতে বহাল থাকে। গত ২৬ এপ্রিলের কেন্দ্রীয় সভায়ও এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ ও র্যাবের টহল টিম থাকবে। বিজিবি থাকবে ১৬ প্লাটুন। ৬০ জন ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবেন।
অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। সকল ধরনের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে অহেতুক যাদের গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে তাদের ছেড়ে দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। সকলে সহযোগিতা করলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো: ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে ও বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় এসময় বক্তৃতা করেন, আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক, বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টি প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও সিপিবির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু।
এছাড়াও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্য থেকে বক্তৃতা করেন, মেমোরি সুফিয়া রহমান শুনু, রুমা খাতুন, শামসুন্নাহার লিপি, লিভানা পারভীন, রোকেয়া ফারুক, মো: সাহাবুদ্দিন, জেড,এ মাহমুদ ডন, হারুন অর রশীদ, আব্দুর রহমান ডিনো, ইমতিয়াজ আলম বাবু, এসএম শামীমুর আলম মান্দার, আনিসুর রহমান বিশ্বাষ, মাহফুজুর রহমান লিটন, শেখ মোহাম্মদ আলী, শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন, রোজিনা বেগম রাজিয়া, আলী আকবর টিপু ও এসএম ওয়াজেদ আলী মজনু।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং প্রাথমিক উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন। সভায় রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ, কেএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবির, জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান, বিজিবি পরিচালক লে: কর্ণেল মো: তারিকুল হাকিম, র্যাব-৬এর পরিচালক খন্দকার রফিকুল হক, আনসার ও ভিডিপি’র জেলা কমান্ডান্ট মোল্লা আবু সাইদ উপস্থিত ছিলেন।
সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনা সার্কিট হাউজে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে। এসময় তিনি বলেন, কেসিসি নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মিটিং হয়েছে। আইন-শৃংখলা, প্রশাসন ও নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্তরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সকলের সহযোগিতায় ১৫ মে’র নির্বাচন একটি গ্রহণযোগ্য হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শনিবার সন্ধ্যায় কেসিসির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলরকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি অনাকাংখিত ঘটনা। পুলিশ কমিশনার বিষয়টি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
যারা এটি ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বহাল আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তবে বিনা অপরাধে যাতে কেউ হয়রানি না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান। বর্তমানে সরকারের কোন নির্দেশ খুলনার পুলিশ বা প্রশাসন মানবে না উল্লেখ করে সিইসি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত সব প্রশাসন চলবে নির্বাচন কমিশনের কথায়।#
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.