যে কারণে ফিলিস্তিনের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হলেন নেতানিয়াহু

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গতকাল শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছে ইসরায়েল ও হামাস। টানা সাত সপ্তাহ যুদ্ধের পর গাজায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধ থেমেছে। চুক্তির আওতায় প্রথম দফায় ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৩৯ ফিলিস্তিনির বিনিময়ে ২৪ ইসরায়েলি ও বিদেশি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। সব মিলিয়ে ৫০ ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
তবে হামাসের সঙ্গে এই বন্দিবিনিময় চুক্তিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধকালানীন মন্ত্রিপরিষদকে রাজি করানোর মোটেও সহজ ছিল না। এর পেছনে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন গাজায় জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের চাপের কাছেই নতিস্বীকার করে হামাসের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয় নেতানিয়াহু সরকার।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এসব জিম্মির মধ্যে ইসরায়েলি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন।
হামাসের হামলার পরপর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার শুধু একটি লক্ষ্যের কথাই বলেছেন। তা হলো হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। প্রথমবার এমন ঘোষণা দেওয়ার চার দিন পরও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জিম্মিদের নাম পর্যন্ত নেননি নেতানিয়াহু।
গাজা যুদ্ধে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি করাও তাদের একটি লক্ষ্য তা ঘোষণা করতে আরও দুই সপ্তাহ নেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তখন তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন, এই যুদ্ধে আমরা দুটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, হামাসকে নির্মূল করা এবং আমাদের জিম্মিদের মুক্তি করা।
যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের অবস্থান পরিবর্তনে মূল ভূমিকা পালন করেন গাজায় জিম্মি পরিবারের সদস্যরা। জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তারা দেশে ও বিদেশে সমান তালে কাজ করে গেছেন। তাদের একজন হলেন আভিচাই ব্রডুচ। তার স্ত্রী ও তিন শিশুকে জিম্মি করেছে হামাস। তিনি হাতে একটি ব্যানার নিয়ে তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে একাই দাঁড়িয়ে পড়েন।
একই সময়ে গাজায় জিম্মি একজনের আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রভাবশালী আইনজীবী ডুডি জালমানোভিচ ও জনসংযোগ গুরু রনেন জুর জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবার ফোরাম নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তারা জিম্মিদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি ডেটা সেন্টার স্থাপন করেন। দ্রুতই সেখানে ইসরায়েলি সাবেক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রধান, তারকা ও চলচ্চিত্র পরিচালকরা যোগ দিতে শুরু করেন।
এ ছাড়া সরকারি কার্যলয়ের সামনে তৈরি করা হয় জিম্মি স্কয়ার। তেলআবিব আর্ট জাদুঘরের বাইরে খোলা জায়গায় ২৪০টি খালি টেবিল রাখা হয়। টেবিলে জিম্মিদের জন্য খাবারও রাখা হয়। দেশের সর্বত্র জিম্মিদের বড় বড় ছবি দিয়ে বিলবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। ইসরায়েল ছাড়াও নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শহরে জিম্মিদের ছবিসহ বিশাল বিশাল বিলবোর্ড টানানো হয়। এ ছাড়া জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে তেল আবিব থেকে জেরুজালেম উদ্দেশে চারদিনের পদযাত্রা করেন গাজার হাজার ইসরায়েলি।
ফ্রান্সে নিযুক্ত সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল শেক বলেছেন, কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক হয়ে পড়ে। এখন এক হাজার থেকে দেড় হাজার আছে। এদের কেউ কেউ পুরো সময় কাজ করে। কেউ কেউ সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা কাজ করে।
হামাসের হাতে জিম্মিদের মধ্যে কয়েক ডজন দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন। তাদের মুক্ত করে আনতে বিদেশি সরকারের মাধ্যমে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন জিম্মি পরিবারের সদস্যরা। তাদের একজন হলেন গিলি রোমান। তার বোন ইয়ার্ডেন জার্মানির পাসপোর্টধারী এবং তাদের ধারণা তাকে গাজায় জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এ জন্য তিনি বার্লিনে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে দেখা করেন।
ড্যানিয়েল শেক বলেন, প্রথম কয়েক সপ্তাহে সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার ছিল হামাসকে পরাজিত করা। যুদ্ধে জয়ী হওয়া। তবে আমরা জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছি। আমরা হয়তো ভূমিকা পালন করেছি। এ জন্য আমি গর্বিত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.