যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইরান ও ইসরায়েল

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: ইসরায়েলে একটি ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ায় আঘাত হানে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে।  জিহাদ মুঘনিয়েহ ওই হামলায় নিহত সাতজনের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি ছিলেন হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতা ও ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাবেক জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের ছেলে।

কয়েক দিন ধরে তারা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলা চালায়। হিজবুল্লাহ ইরানের হয়ে সীমান্তে ইসরায়েলের বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। সংগঠনটি সীমান্তে ইসরায়েলের একটি বহরে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এতে দুই ইসরায়িল সেনা নিহত হয়। সীমান্তে ওই উত্তেজনা চলাকালে দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিহত হন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত স্পেনের এক সেনা।

ওই সময় মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বাধেনি। পরিস্থিতিকে আর উত্তপ্ত না করতে উভয় পক্ষই পিছু হটে।

এর তিন বছর পর উত্তেজনা আবার ফিরে এসেছে। এর মধ্যে তা ২০১৫ সালের ওই পরিস্থিতিকে ছাড়িয়ে গেছে। এখন আর ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের আদলে হিজবুল্লাহর মুখোমুখি হচ্ছে না। এখন ইসরায়েল ও ইরান সরাসরি একে অপরের মুখোমুখি। অনেক দিনের বাগ্‌যুদ্ধ ও গোপন প্রস্তুতি উভয় পক্ষকে মুখোমুখি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের একটি ড্রোন ইসরায়িলের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি জেদ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?। এ ঘটনাটি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে তিক্ততায় নতুন মাত্রা যোগ করে। উভয় পক্ষই আঞ্চলিক অবস্থান পোক্ত করতে একে অপরকে টেক্কা দিয়ে চলছে। আর এটা সিরিয়ার সাত বছরের গৃহযুদ্ধের অন্যতম বড় কারণ হিসেবেও কাজ করছে। এখানে আরও প্রভাবকের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও এই বৈরিতার মধ্যে জড়িয়ে পড়তে পারে।

ইরানের ড্রোন ইসরায়েলের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার পর ইসরায়েল সেটিকে গুলি করে ভূপাতিত করে এবং সিরিয়ায় টি-৪ নামের ইরানের ঘাঁটিতে হামলা চালায়। ১০ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ায় ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর কাজে নিয়োজিত ইসরায়েলের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করা হয়।

ইরানের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ হিসেবে লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছিল ইসরায়েল, এখন ছায়াযুদ্ধের পরিবর্তে দেশ দুটি সরাসরি মুখোমুখি হয়েছে।

টি-৪ সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় কমপক্ষে সাতজন ইরানি নাগরিক নিহত হন। গত সপ্তাহে সিরিয়ায় সামরিক অবস্থানকে লক্ষ্য করে যে হামলা হয়েছে, তা ইসরায়েলের হামলা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যদিও কেউ এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে দায়ী করেনি।

হামা ও আলেপ্পোর কাছে সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ওই হামলা চালানো হয়। এতে ২৬ জন নিহত হয় বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ইরানি মিলিশিয়া।

ইরান ইসরায়েলের ওই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করছে। ইরান সিরিয়ার সবচেয়ে বড় মিত্র। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন দিয়ে আসছে দেশটি।

বাশার আল-আসাদ সরকারকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে ইরান। পাশাপাশি সিরিয়ার বিদ্রোহী ও জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরান তার নিজের অবস্থানও বজায় রাখছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল রাখঢাক ছাড়াই হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। জ্যেষ্ঠ রেভল্যুশনারি গার্ড কমান্ডার হোসেইন সালামি গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কঠোর হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেন।

ইরানের ওই হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ইসরায়েল। সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইসরায়েলের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক আমোস ইয়াদলিন বলেন, ‘ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার পথে এগোচ্ছে।’ তিনি বলেন, সিরিয়ায় সামরিক ও কৌশলগত অবস্থান পোক্ত করার সংকল্প নিয়ে এগোচ্ছে ইরান আর ইসরায়েলের সংকল্প হলো সেটা কোনোভাবেই হতে না দেওয়া। কোনো পক্ষই সমঝোতার ইচ্ছা পোষণ করছে না।

ইসরায়েল মনে করছে, এ ক্ষেত্রে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবিচল সমর্থন পাবে। কেননা, ইরান বিষয়ে ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোতেল ইসরায়েল সফর করেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবিগদর লিবারম্যান ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন নেতানিয়াহু।

এ ছাড়া ইরানের বিষয়ে ইসরায়েল যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে সৌদি আরবও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। অন্যদিকে, মিসর তার অভ্যন্তরীণ ইস্যু এবং সিনাই উপদ্বীপের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতি থাকা মানে দেশটি আমাদের গলায় ফাঁস লাগানো। লিবারম্যান বলেন, ‘আমি জানি, একটা বিষয় নিশ্চিত। আমরা ইরানকে সিরিয়ায় ঘাঁটি গড়তে দিতে পারি না এবং এ জন্য মূল্য দিতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ আমাদের নেই। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.