বিশেষ প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সালের নিহত হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সে দেশেও যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই হত্যাকাণ্ড।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমি পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি ছাত্রের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে, তদন্ত চলছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা এই ঘটনার জন্য দোষী, তাদের বিচার হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আমাদের দেশে মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়, কেউ যেন লঙ্ঘন না করে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। বিশ্বে কোথাও যেন মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, সেটিও আমরা চাই।
এর আগে তথ্য ভবন মিলনায়তনে ৬ থেকে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে সফররত ৩৪ ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত শুধু তাদের সীমান্ত খুলে দেয়নি, ঘরের দুয়ারই খুলে দেয়নি, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিল। নিজে না খেয়ে বা কম খেয়ে এ দেশ থেকে যাওয়া শরণার্থীদের তারা খাইয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন সেটি আমাদের দেশের মানুষ মনে রাখবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দুই দেশের মৈত্রী রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব তাদের ভূমিকার জন্য। ‘
কলকাতার ২৫ জন ও আসামের ৯ জন সাংবাদিকের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশের কিছু অংশ ঘুরে দেখেছেন, বাংলাদেশে যারা ১২-১৪ বছর আগে এসেছিলেন, তারা পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে সামাজিক সম্প্রীতি, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি -এটি অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা সেটিই লালন করি, বুকে ধারণ করি।
তথ্যমন্ত্রী এ সময় ভারতীয় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তিনি ভারতের সহায়তা কামনা করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে জানান এবং কোনো গুজব যেন সাম্প্রদায়িক বা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সাংবাদিকের সহযোগিতা কামনা করেন।
অর্থনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বলে দেয়, এ দেশ থেকে অর্থনৈতিক কারণে কোনো প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশ ঘটার কোনো কারণ নেই।
কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর বলেন, আজ ১০ জানুয়ারি ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের কাছে এক বিশেষ দিন। কারামুক্তির পর এই দিনেই স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন। আর এই দিনে বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে পেরেছি, সে জন্য আমরা অত্যন্ত গৌরবান্বিত।
আসামের আঞ্চলিক সংবাদ টিভি চ্যানেল প্রাগ নিউজের প্রধান সম্পাদক প্রশান্ত রাজগুরু একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখানোর জন্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান ভারতীয় সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার ওপর পাঁচটি গ্রন্থের একটি করে সেট উপহার দেন।
মন্ত্রী কলকাতা প্রেস ক্লাব প্রকাশিত ‘অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ববঙ্গের মহিয়সীরা’ গ্রন্থটি নেন এবং সাংবাদিক সুমন ভটাচার্য সম্পাদিত ‘শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.