‘মোখা’ ১৪ মে দুপুর থেকে ভোলা থেকে কক্সবাজার ও রাখাইন উপকুল অতক্রম করতে পারে, খুলনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুত ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র

খুলনা ব্যুরো: মোখা’১৪ মে দুপুর থেকে ভোলা থেকে কক্সবাজার ও রাখাইন উপকুল অতক্রম করতে পারে,খুলনায় ‘মোখা’র ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুত ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র,ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
Bangladesh Weather Observation Team (BWOT) এর ফাউন্ডার পারভেজ আহমেদ পলাশ বিটিসি নিউজকে জানান, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গপোসাগর ও তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় মোখা কিছুটা উত্তরে অগ্রসর হয়েছে। এবং শক্তি বাড়িয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হয়েছে। এটি আজ ১১ মে বিকেল ৪ টা বেজে ২০ মিনিটে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। কক্সবাজার থেকে ১০৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। এটি আরও জোরদার হয়ে উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতেপারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটার এর ভেতরে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর ঐ স্থানে বেশ উত্তাল আছে। এটি আজ রাতে ক্যাটাগরি ১ শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে। এটি উপযুক্ত পরিবেশ পেলে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে।
সিস্টেম টি বাংলাদেশ উপকূল থেকে এখনও অনেক দুরে থাকায় এর কোন প্রভাব এখনও দেশের উপকূলে পড়েনি। তবে আগামী ১৩ মে থেকে এর প্রভাব পড়তেপারে।
সিস্টেম টি প্রাথমিকভাবে উত্তর দিকে অগ্রসর হতেপারে, এবং পরবর্তীতে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে।
তিনি আরো জানান,এটি ক্যাটাগরি ৩ বা ৪ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে।
এটি আগামী ১৪ মে দুপুর থেকে ভোলা থেকে কক্সবাজার ও রাখাইন এর ভেতরে যেকোনো উপকূলে প্রবল শক্তি নিয়ে মোখা ঘন্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বা তারচেয়ে অধিক গতিতে উপকূল অতিক্রম করতেপারে। তবে আঘাত হানার স্থান পরিবর্তন হতেও পারে কিছুটা। বর্তমান সময় পর্যন্ত কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী উপকূল বেশি ঝুকিপূর্ণ।
এর প্রভাবে আগামী ১৩ মে থেকে ১৬ মে এর ভেতরে,চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতেপারে। এইসকল এলাকায় গড়ে ১০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এখানে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগ ও খুলনা বিভাগ অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।
ঘূর্ণিঝড় মোখা সরাসরি দেশের চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করলে, আঘাত করা স্থানে ১২ থেকে ১৮ ফুট উচ্চ বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় টি চট্টগ্রাম আঘাত করলে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহারধ্বস এর আশংকা করা যায়।
এদিকে দেশের সকল সমুদ্র বন্দরে ২ দুই নম্বর দুরবর্তী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ মে) সাড়ে বিকেল ৩টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা” মোকাবিলার জন্য খুলনার ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরমধ্যে মাল্টিপারপাস আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ২৪টি এবং ৩৮৫টি স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এরমধ্যে দাকোপ উপজেলায় ১১৮টি, কয়রায় ১১৭টি, বটিয়াঘাটায় ২৭টি, পাইকগাছায় ৩২টি, ডুমুরিয়ায় ২৫টি, রূপসায় ৩৯টি, ফুলতলায় ১৩টি ও দিঘলিয়ায় ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বিটিসি নিউজকে বলেন, এখনও ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়েনি খুলনায়। তবুও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ের আমাদের কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া বিপদ সংকেত জারি হলে তারা এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ বিটিসি নিউজকে বলেন, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে তাতে আপাতত খুলনার উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা কম। তবে ঝড়ের প্রভাবে বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ১৩ মে থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর জোয়ারের সময় ঝড় হলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। তবে এখনও অনেক দূরে আছে। যখন বিপদ সংকেত দেওয়া হবে তখন বলা যাবে কোন এলাকায় কেমন জলোচ্ছ্বাস হবে। এখন যে গতিপথ আছে তাতে বরিশাল এলাকার পাশ দিয়ে নোয়াখালী, ফেনীর ওইদিক দিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ, সেন্টমার্টিনের পাশ দিয়ে মায়ানমার হয়ে যাবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.