মাদকে ভাসছে রাজশাহী, বিপথে তরুণ সমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকে ভাসছে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী। হেরোইন, ইয়াবা আর ফেনসিডিলের ছড়াছড়িতে বিপথে যাচ্ছে রাজশাহীর তরুণ সমাজ। শুধু খুচরা বিক্রিই নয়, এখান থেকেই মরণনেশা হেরোইনের বড় বড় চালান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুক্রবার দিবাগত রাতেও রাজশাহীতে ৭০ কেজি গাঁজার একটি চালান আটক হয়েছে।

তাছাড়া প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবার চালান। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন অভিভাবক মহল। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যে। ছেয়ে গেছে নগরী ও জেলা-উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকায়। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাঝে মধ্যেই ধরা পড়ছে মাদকের বড় বড় চালান।

গ্রেফতার হচ্ছে মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারীরা। তবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা। কয়েক দিন আগেই জেলার গোদাগাড়ী পৌরসভার মাদারপুর মহল্লায় অভিযান চালিয়ে দেড় কেজি হেরোইনসহ এক মাদকব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর এ এম আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়েই কেজি কেজি হেরোইন ভারত থেকে এসে সারাদেশে পাচার হচ্ছে। তবে তারা সাধ্যমতো সেসব চালান আটকের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝেই এক-দুই কেজি করে হেরোইন জব্দ করা হচ্ছে।

এদিকে ওই দিনই রাজশাহী মহানগরীর গুড়িপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আড়াই হাজার পিস ইয়াবাসহ এক দম্পতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার গোলজার হোসেন ও তার স্ত্রী রাফিয়া খাতুন দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এ কারবার চালিয়ে আসছিলেন।

এর আগে গত বছরই তাদের ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু জামিনে জেল থেকে বেরিয়েই তারা আবার জড়িয়ে পড়েছিল পুরনো এ কারবারে। এদিকে গত ৩ মে নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ৬ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবাসহ দুই যুবককে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

তারা হলেন, কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব মেরঙলোয়া গ্রামের সুবোধ বড়–য়া ওরফে মুন্না ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের রুবেল আলী। র‌্যাব জানায়, সুবোধ বড়ুয়া কক্সবাজার থেকে রাজশাহীতে ইয়াবার চালানটি পৌঁছে দিতে এসেছিলেন।

অন্যদিকে মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার গুড়িপাড়া এলাকাটি এখন মাদকের খুচরা বিক্রির জন্য ‘রাজশাহীর মাদকের ড্যান্ডি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত দুই শতাধিক মাদকসেবীকে এই এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা করেছে র‌্যাব।

এছাড়া নগরীর উপকণ্ঠ সিটিহাট এলাকাতেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে নানা মাদকদ্রব্য। এই এলাকাতেও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব। গত বুধবার দিবাগত রাতে এ এলাকা থেকে ৬২ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী সীমন্তবর্তী এলাকা হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে ফেনসিডিল ও হেরোইন আসছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ে আসেন মাদক সিন্ডিকেটের হোতারা। টাকার লোভ দেখিয়ে মাদক সরবরাহের কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুদেরও ব্যবহার করছে তারা। সূত্র জানিয়েছে, মাদকব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষানগরী হওয়ায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর অবস্থান রাজশাহীতে।

তাই শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে আনা হচ্ছে মাদকদ্রব্য। মাদকের বেশির ভাগ ক্রেতা আবার তরুণরাই। মাদক সেবন করে বিপথে যাচ্ছে তারা। মাদকের টাকা জোগাড় করতে সন্ত্রাস ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ঘটছে নানা অঘটন।

এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় সর্তক রয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। মাদকব্যবসায়ীদের ধরতে প্রতিনিয়তই অভিযান চালানো হয়। সে জন্য প্রায়ই ধরা পড়ছে মাদকের বড় বড় চালান। তবে সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজশাহী জলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পদ্মাপাড়ের গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় মাদকব্যবসায়ীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাই এসব থানার পুলিশকে সব সময় বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয় মাদকের বিরুদ্ধে। তারা মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.