মন্দিরের ফল ‘চুরির’ অভিযোগ, আত্মহত্যা করেন সেবায়েত : ডিবি

বিশেষ প্রতিনিধি: মন্দিরের ফল ‘চুরির’ অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করা হবে ৬৫ বছর বয়সী সেবায়েত পরীক্ষিৎ দাসের। ঢাকা মহানগর উত্তরের কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতাদের কাছ থেকে এমন কথা শুনে মাথা নিচু করে বারবার তাদের পা জড়িয়ে ধরে মাফ চান সেবায়েত (কেয়ারটেকার) পরীক্ষিৎ দাস। এরপরও মন গলেনি নেতাদের। এমন পরিস্থিতিতে সালিশ বসলে অপমান-অপদস্থ হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে তিনি কীভাবে মুখ দেখাবেন! এই ভয় থেকেই আত্মহত্যা করেছেন সেবায়েত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন ডিবি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে ডিবির মিরপুর বিভাগ। তাদের গ্রেপ্তারের পর আজ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মন্দির পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যের নির্মম আচরণ ও কঠোর মনোভাব কেড়ে নিল পরীক্ষিতের প্রাণ। ফল চুরির অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে বিচারে সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি।’
গত ১৬ আগস্ট কাফরুলে মন্দিরের ভেতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সেবায়েত পরীক্ষিৎ। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কল্যাণী এলাকায়।
আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকারের বিরুদ্ধে মৃতের ছেলে ভক্ত দাস বাদী হয়ে কাফরুল থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় এজহারভুক্ত তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
পরীক্ষিতের পরিবারের বরাত দিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মন্দির কমিটির লোকজনের কারণে পরীক্ষিতের এই পরিণতি। এর পুরো দায় তাদের। তাদের নিপীড়নের কারণে এই বয়সের একটি লোক আত্মহননের মতো সিদ্ধান্ত নিলেন। চুরি কেউ করলেও তা ক্ষমা করা যায়। আর অভিযোগ করলেও তা প্রমাণ সাপেক্ষ। এ জন্য দেশে আইন আছে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরীক্ষিৎ দাসের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান জানান, প্রায় ১১ বছর কাফরুলে কেন্দ্রীয় মন্দিরে কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন পরীক্ষিৎ। ১৫ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি ব্যাগ নিয়ে মন্দির থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। ওই ব্যাগে মন্দিরের ফল ছিল। পরে সেগুলো চুরির অভিযোগ তোলেন মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকার। পরদিন সকালে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করার হুমকি দেওয়া হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মন্দিরের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে- পরীক্ষিত দাস বের হচ্ছেন। এ সময় বিপ্লব, সুমন ও বাদল তাকে বাধা দেন। তারা হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন পরীক্ষিৎ দাসের সঙ্গে। একপর্যায়ে পরীক্ষিত দাস তাদের একজনের দুই পা জড়িয়ে ধরেন। পরে ওঠে ওই ব্যক্তিকে বুকে আঁকড়ে ধরেন তিনি। ভিডিওতে স্পষ্ট, তিনি বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে অপর দুজনেরও পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান। পরে তারা পরীক্ষিৎ দাসকে রেখে চলে যান। এরপর মন্দিরে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির রেলিংয়ের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন পরীক্ষিৎ। পরদিন সকালে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কাফরুল থানা পুলিশ।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.