ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব কী আসন্ন?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও খালিস্তান আন্দোলনের নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম নিখিল গুপ্তা বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা ধরা পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রে। মার্কিন সরকারের অনুরোধে ৫২ বছর বয়সী গুপ্তা এখনো ওই দেশেই বন্দী রয়েছেন। ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে একটি অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর। সেখানে বলা হয়, একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন গ্রেপ্তার ভারতীয় ওই নাগরিক। তবে তারা স্পষ্ট করে নাম উল্লেখ করেননি। 
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, খালিস্তান আন্দোলনের যে নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, মার্কিন নাগরিক গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
কয়েক দিন আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের ঘোষিত সন্ত্রাসী গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। ২০২০ সাল থেকে পান্নুকে সন্ত্রাসী তালিকায় রেখেছে ভারত। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক।
জানা গেছে, পান্নুকে হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনিকে নগদ এক লাখ মার্কিন ডলার দিতে চাচ্ছিলেন নিখিল গুপ্তা। কিন্তু সেই ভাড়াটে খুনি ছিলেন একজন ছদ্মবেশী ফেডারেল এজেন্ট।বিষয়টি এরই মধ্যে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছে বলে দাবি করেছে মার্কিন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলন, ‘এ ঘটনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এতটাই বিচলিত করেছিল যে, সিআইএ’র ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস আর ডিরেক্টর অফ ন্যাশানাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাভ্রিল হেইনসকে তিনি সশরীরে ভারতে পাঠিয়েছিলেন। তারা বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।’
বিবিসির এশিয়ান নেটওয়ার্কের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু প্রশ্ন তোলেন, ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার ফলাফলের মুখোমুখি হতে ভারত প্রস্তুত আছে তো?’
পান্নু জানান, যারাই তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে, তারা ভারতীয় কূটনীতিক হোন অথবা ‘র’ (ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা), সবাইকেই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
এ ঘটনায় ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা হয়েছে। মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘পুরো ঘটনায় একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা বলেছি, এটা আমাদের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে।’ তবে এর বেশি কিছু জানাতে চাননি তিনি।
কয়েক মাস আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ তুলেছিলেন, তার দেশের এক শিখ নাগরিক, যিনিও একজন খালিস্তানি নেতা ছিলেন, তাকে হত্যা করেছে ভারত সরকারের এজেন্টরা।
ওই বিষয়ে কানাডার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে বলেও দাবি করেছিলেন ট্রুডো। ওই অভিযোগ তোলার পরে ভারতের সঙ্গে কানাডার এক অভূতপূর্ব কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে।
একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ও ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলার কারণে দুই মিত্রের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
নিউজ১৮কে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এই গ্রেপ্তার অর্থহীন কারণ আমেরিকানরা হঠাৎ করে এটিকে সরকারি ভূমিকার সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা পান্নুনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য প্রমাণাদি শেয়ার করেছি। তাদের এসব প্রমাণ নিয়ে দ্রুত জবাব দেওয়া উচিৎ ছিল। পান্নুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপেদেষ্টাকে হুমকি দিয়েছে- তবে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে আছে।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা শুরু হতে পারে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.