ভাঙতে বসেছে বিশ্বের বৃহত্তম “থ্রি জর্জেস” বাঁধ, ঝুঁকিতে ৪০ কোটি মানুষ!

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারি, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ উত্তেজনার পর এবার প্রকৃতির রোষানলে পড়েছে শি জিনপিংয়ের দেশ চীন। ভয়াবহ বন্যায় যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ।

ভয়ানক বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বাঁধটি। এই বাঁধ ভেঙে গেলে চীনের ৪০ কোটিরও বেশী মানুষ ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ চীনের “থ্রি জর্জেস”। এই বাঁধের কাছে এরই মধ্যে বন্যা সতর্কতা জারী করা হয়েছে। এখানেই তৈরী হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প।

বলা হচ্ছে, বিগত ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে এখন চীন। চলতি জুন মাসে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্য অঞ্চল জুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। লাগাতার এই বর্ষণের কারণে একাধিক নদীর পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ফলে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই আকাশ যে ভারী গর্জন শুরু করেছে, সেই সঙ্গে বর্ষণও, তাতে আর কয়েক সপ্তাহ বর্ষণের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে চীনের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। দুই-তিন লক্ষ নয়। এক কোটিও নয়। ৪০ কোটি মানুষ! এক সঙ্গে এত মানুষের রাখার মতো স্থানসঙ্কুলান হবে কী করে তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ঘুম উবে গেছে।

এর মধ্যে যদি আবার বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা “থ্রি জর্জেস” বাঁধ ভাঙে, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া চীনের পক্ষে মুশকিলই হবে।

চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা অবশ্য বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। গ্লোবাল টাইমসের বক্তব্য, এ ধরনের যে রিপোর্ট বেরিয়েছে তা ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বন্যায় বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে চীনেরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। যার জেরে দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মধ্য চীনের ২৪টি প্রদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘোষণা করতে হয়েছে। বিশেষত ইয়াংজি নদী ও থ্রি জর্জেস বাঁধের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।

চীনের হুবেই প্রদেশের সান্দোপিং শহর পার্শ্ববর্তী ইয়াংজি নদীর ওপর বিশ্বের সর্ববৃহৎ হাইড্রো-ইলেকট্রিক বাঁধটি তৈরী করা হয়।

চীনের দাবি অনুযায়ী, এই বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে চীনের এই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু হয়েছে। বাঁধটির মূল পরিকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছিল ২০০৬ সালে।

এই বাঁধ নিয়ে ভারত, কম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিক বার আপত্তি তোলা হয়েছিল। যদিও চীন সরকার সেগুলো গুরুত্ব দেয়নি। এশিয়ান টাইমস ফাইনান্সিয়্যালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৪৯ সালের পর চীনে এটাই সবচেয়ে বড় বন্যা।

এই বন্যার কারণে থ্রি জর্জেস বাঁধের ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে। “থ্রি জর্জেস” প্রকল্পের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার ঝাও ইউনফা এরই মধ্যে জনগণকে সাবধান করেছেন। এই “থ্রি জর্জেস” বাঁধ যে পানি ধরে রাখার অবস্থায় আর নেই, তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।

বন্যার পানির চাপে বাঁধ যে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে, তা তিনি গোপন করেননি। বলেছেন, পুরো ইয়াংজি নদী অববাহিকার বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এই বাঁধের নেই। (সূত্র: এই সময়)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.