বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ে বিপাকে নাটোরের কৃষক

নাটোর প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম চলনবিলে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা উৎসব।আগাম জাতের বোরো ধান পেকে যাওয়ার কারণে এখন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর শিলা বৃষ্টির কারণে এবার বোরো ধানে দেখা দিয়েছে কালো চিটা। যার কারণে বোরো ধানের ফলনে দিয়েছে বিপর্যয়।বিঘাপতি ২০ থেকে ২৫মন হারে যেখানে ফলন হতো, চিটা হওয়ার কারনে বর্তমানে ১৪ থেকে ১৫ মন হারে ধানের ফলন হচ্ছে। তাছাড়া ধানের দামও খুব একটা বেশি না হওয়ার কারনে লোকসান গুণতে হচ্ছে বোরো চাষীদের।

এদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সময় মত ধান কাটা শ্রমিক পাচ্ছে না চলনবিলের বোরো চাষীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চলনবিলে বোরো ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা এখনো না আসার কারণে ধান নিয়ে দুচিন্তায় রয়েছে তারা। স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটা শুরু হলেও জেলার বাহিরে শ্রমিক না আসার কারণে দেখা দিয়েছে সংকট। মন প্রতি ১০ থেকে ১২কেজি করে ধান দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে জমির মালিকদের।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই বছর নাটোরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো ধান চাষ হয় ৬১হাজার ৪৩৫হেক্টর জমিতে। যা থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩লাখ ১৮হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চলনবিলের সিংড়ায় ৩৭হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে আগাম কিছু জাতের ধান রোপন করেন কৃষকরা। তবে চলনবিলে বোরো ধানে চিটা হওয়ার কারনে এই লক্ষ্যমাত্রা পুরন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব বলছে,যদি কৃষকের নিজের জমি হয় সেক্ষেত্রে এক বিঘা জমিতে এবার কৃষকদের বোরো ধান উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা। আর বর্গা নিয়ে যারা চাষ করেছেন তাদের খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৪হাজার টাকা। সে তুলনায় বর্তমানে ধান উৎপাদন হচ্ছে ২০ থেকে ২২মন হারে। আর বাজারে ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা বিক্রিয়

হওয়ার কারনে একজন কৃষক মোট সাড়ে ১৬ থেকে ১৮হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারছে। তবে বোরো ধান কর্তন করতে গিয়ে খরচ বেশি পড়ার কারনে খুব একটা লাভ হচ্ছে না কৃষকের।তবে

সরকারী এই হিসেবের সাথে বিরাট ফারাক খুঁজে পাচ্ছে কৃষকরা। তারা বলছে,যারা নিজেদের জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলেন, তাদের বিঘাপতি খরচ হয়েছে ৭থেকে ৮হাজার। আর যারা বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তাদের খরচ হয়েছে ৮ থেকে ৯হাজার টাকায়। বর্তমানে বোরো ধানে চিটায় ফলন কমিয়ে দিয়েছে। চিটার কারনে বর্তমানে বিঘাপতি ১৪ থেকে ১৫ হারে ধান হচ্ছে। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে ধান কর্তনে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে সাড়ে তিন মন থেকে চারমন। ফলে কৃষকের ধান এসে ঠেকছে ১০ থেকে ১১ মন। বর্তমান বাজার দরে ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা বিক্রিয় হওয়ার কারনে এক থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

চলনবিলের সাতপুকুরিয়া গ্রামের বোরো চাষী লাবু প্রামানিক বিটিসি নিউজকে বলেন, এবার বোরো ধান করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কালো চিটা হওয়ার কারনে ফলনেও বিপর্যয় ঘটেছে। যেখানে চলনবিলে ২০ থেকে ২৫মন বিঘাপতি ধান হত, বর্তমানে ১৪ থেকে ১৫মন হারে ধান হচ্ছে। তাছাড়া ধানের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা হওয়ার কারনে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে।হুলহুলিয়া গ্রামের কৃষক তৌফিক পরশ বলেন, বিঘা পতি খরচ ৭০০০ থেকে ৮০০০হাজার টাকা। আর ধানের ফলন হচ্ছে মাত্রা ১২ থেকে ১৪মন হারে। আবার জমির মালিককে দিতে হচ্ছে ৫মন ধান।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ফলন কম হওয়ার কথা স্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, চলনবিলে আগাম যারা বোরো ধান রোপন করেছিলেন তাদের ধানে কিছুটা চিটা হচ্ছে। কারণ ধান ফুলে বের হওয়ার সময় কিছু ঝড়ো হাওয়ার কারনে পরাগায়ন নাঘটার কারনে চিটা দেখা দিচ্ছে। তাতে ফলনও কিছুটা কম হচ্ছে।তিনি বলেন,আগাম যারা বোরো ধান রোপন করেছিলেন তাদের ফলন ২০ থেকে ২২মন হারে হচ্ছে। বর্তমানে বাজার দর ৭৫০ থেকে ৮০০টাকা থাকায় দামও ভাল পাচ্ছে কৃষকরা। তবে এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন হওয়ার কারনে বন্যার আভাস রয়েছে চলনবিলে। যার কারনে জমির ধান ৮০ভাগ পেকে গেলেই ধান কাটার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.