বৃহদাকারে তেল ছাড়ের ঘোষণা বাইডেনের

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দেশটির জরুরি তেল রিজার্ভ থেকে বৃহদাকারে তেল ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পেট্রোলের দাম সহনীয় রাখতে তেল কোম্পানিগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের লাগাম টানতেই এ ঘোষণা দিলেন বাইডেন।
তিনি এমন সময় ঘোষণাটি দিলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র চরমভাবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে দেশটির নাগরিকরা চরম ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। বাইডেনের সহকর্মী ডেমোক্র্যাট দলের আরেক নেতা মনে করেন, তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে তারা নভেম্বরের নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়।
রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১১০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে পুরো বিশ্বেই এর প্রভাব পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র আগামী মে থেকে পেট্রোলিয়াম রিজার্ভের (এসপিআর) ১০ লাখ ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়বে। প্রতিদিন ১ মিলিয়ন করে যুক্তরাষ্ট্র ছয় মাসে বাজারে ছাড়বে ১৮০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল।
হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, এটি বিশ্বের জন্য একটি পরিণতি এবং বিপদের মুহূর্ত আর আমেরিকান পরিবারগুলোর জন্য খারাপ সময়। তিনি আরও বলেন, এটি দেশপ্রেমেরও একটি মুহূর্ত। তিনি তেল কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের তাদের গ্রাহকদের এবং আমেরিকান পরিবারগুলোকে সেবা দিতে বলেছেন।
তিনি কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা আইন পাস করে কোম্পানিগুলোকে হাজার হাজার অব্যবহৃত তেল রাখা, গ্যাস ইজারা এবং পাবলিক জমিতে কূপ বসানোর জন্য ফি নির্ধারণ করে।
গোটা বিশ্বে প্রতিদিন জ্বালানি তেলের চাহিদা ৯০ মিলিয়ন ব্যারেল। বাইডেনের ছয় মাসে ১৮০ মিলিয়ন তেল ছাড়ের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী চাহিদার দুই দিনের সমান। এটি রাশিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল রফতানির চেয়ে বেশি চাহিদা মেটাবে।  রাশিয়া সাধারণত বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের প্রায় ১০ শতাংশ উৎপাদন করে। তবে মার্কিন তরল জ্বালানি আমদানির মাত্র ৮ শতাংশ এর জন্য দায়ী।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তেল ছাড়ের বিষয়টি রাশিয়ান তেলের প্রায় তিন মিলিয়ন ক্ষতির তুলনায় কম হবে এবং বিশ্ব ক্রেতারা রাশিয়ার তেল এড়িয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে তারা হারিয়ে যেতে পারে।
তারা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে তেলের জন্য প্রচুর কূপ খননের কথা বলেছেন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং ব্যাটারির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
বাইডেন প্রশাসন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তেল ছাড়ের বিষয়গুলো সমন্বয়ের জন্য কাজ করেছে, যা বিশ্ববাজারে প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল তেল ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এই তেল ছাড়ের ফলে মার্কিন গ্যাসোলিনের দাম প্রতি গ্যালন ১০ থেকে ৩৫ সেন্ট পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদাররা যদি তেল ছাড় নিয়ে কাজ করেন, তবে তেলের দাম আরও কমতে পারে। বাইডেন আশা প্রকাশ করে বলেন, অংশীদাররা অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৫০ মিলিয়ন তেল ছাড়তে পারেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এমন সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। বিশ্বে কখনো এত লম্বা সময় ধরে মজুত থেকে প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারল তেল ছাড়া হয়নি। তেল ছাড়ার এ বিষয়টি এ বছরের শেষ সময় পর্যন্ত সংকট কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাজ করবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.