বুড়িমারী স্থলবন্দরের ১৬ কর্মকর্তাকে এক সঙ্গে বদলি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এক সঙ্গে বদলি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে বদলির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থলবন্দরের প্রধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের শুরু থেকে একসঙ্গে এতগুলো কর্মকর্তাকে বদলি করার রেকর্ড এবারই প্রথম। সরকারি চাকরির এটি একটি নিয়ম মাফিক প্রক্রিয়া-বদলির নির্দেশ পাওয়া কর্মকর্তা বললেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছে বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁদের সবাইকে এ স্থলবন্দর থেকে একযোগে প্রত্যাহার করে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ঢাকার আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) বিভাগের ডি এম আতিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি বদলির আদেশের চিঠি জারি করা হয়। এতে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে বদলি করে সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীনকে ট্রাফিক পরিদর্শক জাহীদুর রহমান, হিসাবরক্ষক আদনান খালিদ বসুনিয়া ও ক্যাশিয়ার ভ্রমর কুমার সরকারকে কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরে, ট্রাফিক পরিদর্শক সালাউদ্দিনকে ফেনীর পরশুরাম বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, ট্রাফিক পরিদর্শক শাহিন মাহমুদ ও আমিনুল হককে ময়মনসিংহের গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরে পাঠানো হয়েছে।
একই সঙ্গে ওয়্যার হাউস সুপারিনটেনডেন্ট মানিকুর রহমানকে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, একই পদের মিনহাজ উদ্দিন, হারুন অর রশিদ, আবুল বাসার ও কম্পিউটার অপারেটর হাসমত উল্লাহকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে, ওয়্যার হাউস সুপারিনটেনডেন্ট মাছুদ রানাকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে, একই পদের ফিদা হাসানকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, এস. এম মাসুম বিল্লাহকে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরে এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সেলিম রেজাকে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়েছে।
আদেশের চিঠিতে ওই ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। একই তারিখে উল্লেখিত স্থলবন্দরগুলো থেকে পদায়ন করা ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির একটি লিখিত অভিযোগ চলতি বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়। এতে ভারতীয় ট্রাক থেকে ওজন স্টেশনে অবৈধভাবে টাকা আদায়, খাদ্যশস্যের ট্রাক থেকে টাকা গ্রহণ, বিল শাখায় জালিয়াতি করে সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ, আগত পণ্যবাহী গাড়ি ও ওজনের গাড়ির গরমিল, রাত্রিকালীন ট্রাক চার্জ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ,১-২ দিনের ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে না থাকা, ভুয়া চালান করা, ওজন স্কেলে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বহিরাগতদের নিয়ে কর্মস্থলে আড্ডা দেওয়াসহ নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব হরিলুট ও লুটতরাজ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিক, আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের উল্লেখ করে দেওয়া অভিযোগে স্বাক্ষর না থাকলেও দুদক বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নেয়। গত ৭ আগস্ট অভিযোগের কপি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে দেয় কমিশন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৪ আগস্ট অভিযোগের কপিটি পেয়ে ১৬ আগস্ট আমলে নেয়। এর ১১ দিনের মাথায় উল্লেখিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির নির্দেশ দেয় ঢাকার স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আমিসহ ১৬ জনকে বদলি করা হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়টি আমি জানি না। এখানে দুর্নীতির কিছুই নাই। বিভিন্ন ধরনের বেনামি চিঠিপত্র অনেকেই অনেকভাবে দেন। আর এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। মূলত একে অপরকে কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনায় এ রকমটা করা হয়েছে।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.