বিনা দোষে ৫৯ দিন জেল খাটলেন চা বিক্রেতা বাবলু শেখ এক চা বিক্রেতা! আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না

নাটোর প্রতিনিধি:  পুলিশের অসতর্কতার কারণে বিনাদোষে ৫৯ দিন জেল খাটতে হলো নাটোরের সিংড়ার দরিদ্র চা বিক্রেতা বাবলু শেখকে । ২০০১ সালের এক মারামারির ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার নামে কোন মামলাই নেই। আইনজীবী বলছেন, হয়রানির উদ্দেশ্যেই শ্রী বাবুর বদলে বাবলু শেখ হাজত খেটেছেন ।

বাবলু শেখ (৬০) । পেশায় চা বিক্রেতা । নাটোরের সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে । নাটোরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের একটি মারামারির মামলায় সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের শ্রী দেবদাসের ছেলে শ্রী বাবুকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেন। কিন্তু তার পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয় বাবলু শেখকে ।

আদালতের নথিপত্র ও বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একই বছরের ১৮ এপ্রিল কাজী আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর ১৪।

 

তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত মমিনুল ইসলাম শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ১৫ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। পরে একই বছরের ২৮শে ডিসেম্বর পুনরায় শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হেলেনা পারভীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামি শ্রীবাবুকে গ্রেপ্তার না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠান পুলিশ।

এই ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ছয় দিন পর ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান। পরে ওই পরিচয়েই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন এবং সাক্ষ্য গ্রহণ গ্রহণ শুরু হয় । যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুর দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়ে আদালতে থেকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি একই বছরের ১৬ আগষ্ট আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন।

নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে গিয়ে কথা হয় মামলার বাদী কাজী আব্দুল মালেকের স্ত্রী ওলেগান বেওয়ার সাথে। তিনি বলেন, তার স্বামী প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিসহ পরিবারের সবাই জানে এ মামলার কার্যক্রম এতদিনে স্থগিত হয়ে গেছে।

কাজী আব্দুল মালেকের ছেলে ও মামলার সাক্ষী বাতেন কাজী বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা জানি যে, এতদিনে এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। তাছাড়া এ মামলার আসামী শ্রী বাবু নাসের এক ব্যক্তি বাবলু শেখ নয় ।

একই গ্রামের বাসিন্দা মামলার সাক্ষী নবীউল্লাহ বলেন, শ্রী বাবু নামের কেউ অত্র এলাকায় নাই। তবে যে বাবলু শেখকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল এ মামলার সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই।

আঁচলকোট গ্রামে গেলে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা মকছেদ আলী প্রাং, জনাব আলী ও গ্রাম্য ডাক্তার বিশ^নাথ সরকারের সাথে, তারা জানায় অত্র এলাকায় শ্রী বাবু নামের কেউ কোনদিনই ছিলনা, বাবলু শেখ এলাকার একজন সহজ-সরল মানুষ। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

বাবলু শেখ বলেন, আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না। আমি একজন নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষ। অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনি দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ভুল পরিচয়ের বিষয়টি জানার পর আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁর ভোটার পরিচয়পত্র আদালতে জমা দিয়ে ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তাতেও সমাধান পাইনি। তাই বিনা অপরাধে দুইবারে ৫৯ দিন কারাভোগ করেছি।

বাবলু শেখের অন্যতম আইনজীবী দেওয়ান লুৎফর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, বাবলু শেখের জামিনের সময় অন্য আইনজীবী ছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘পরে আমি বাবলু শেখের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করে ত্রুটির বিষয়টি অবগত করেছি। এরপরও তাঁর সাজা হওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবি শামীম উদ্দিন বিটিসি নিউজকে বলেন, মামলার তদন্তকারী দুইজন কর্মকর্তা ও আগের আইনজীবির গাফিলতির কারণে বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বাবলু শেখকে। তিনি পরবর্তী শুনানিতে খালাস পাবে বলে আমি আশাবাদী।

নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, অনেক আগের বিষয়, না জেনে বলতে পারছি না। খোঁজ-খবর নিয়ে পরে বলতে পারব।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.