বিত্তশালী স্বজনরা রাস্তার পাশে ফেলে গেলেন বৃদ্ধাকে

 

ঢাকা প্রতিনিধিরাজধানীর মিরপুরে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে সড়কের ধারে ফেলে গেছে স্বজনরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নানা চেষ্টার পর একটি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েছে।

ওই নারী বর্তমানে পাইকপাড়ার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে’ আছেন। কেন তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে ওই বৃদ্ধার স্বজনরা আর্থিক দিক থেকে বিত্তশালী বলে জানা গেছে।

ফেসবুকে এই বিষয়টির একটি সচিত্র লেখনি প্রকাশের পর বৃদ্ধাশ্রমে এসে একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেকে ওই বৃদ্ধার দূরসম্পর্কের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তার কাছে ওই নারীকে দেননি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের কর্মীরা।

সেই দিনের ঘটনার বর্ণনায় হাসিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একজন প্রবীণ মাকে পরিবারের সদস্যরা রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গেছে। কখন থেকে সে রাস্তার পাশে পড়ে আছে কেউ জানে না।’

‘সকাল আটটার দিকে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় জহুরা নামে এক মহিলা প্রথমে তাকে দেখতে পান। পরে দুপুর তিনটায় বাড়ি ফেরার পথেও তাকে একই জায়গায় পরে থাকতে দেখি। বেশ কিছু মানুষ ওই বৃদ্ধাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। পরে জানা যায় ওই বৃদ্ধার নাম আমেনা খাতুন। বয়স আশির উপরে। প্রায় একঘণ্টা রাস্তার মানুষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না।’

পরে জহুরা নামে ওই নারী পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক মহিলার সাহায্য নিয়ে বৃদ্ধাকে রিকশা তোলেন। প্রথমে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘে যান। সেখান থেকে জানানো হয় পরিচয়হীন পথ প্রবীণদের রাখার কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। তাই নীচে বসে থেকে তারা যায় শেরেবাংলানগর থানায়।’

‘কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার সব শুনে তিনিও কোন সমাধান দিতে পারেননি। বলেন, তারাও কিছু করতে পারবে না। তাদের কিছু করতে হলে কোর্টের অর্ডার লাগবে। এ জন্য বৃদ্ধাকে কোর্টে পাঠাতে হবে। পরে পাইকপাড়ার বৃদ্ধাশ্রমে কল দেন হাসিম। জানান, তারা সব শুনে নিয়ে যেতে বলেন এবং ওই বৃদ্ধাকে সেখানে নেওয়া হয়। সেখানে ত্রিশের বেশি বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন।

আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ইমাম নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, অভিভাবকহীন একজন মহিলা এসেছিল। তবে আমরা তাকে রাখতে পারিনি। কারণ এখানে কেউ থাকতে গেল প্রায় ৭/৮ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। সেটা কে বহন করবে, সেটার একজন নমিনি লাগে। এছাড়া আমাদের নিয়মে আছে পরিচয়হীন এবং স্বাস্থ্যগত অসুস্থ এমন কাউকে রাখা নিষেধ। তবে গাজীপুরে এমন অভিভাবকহীন মায়েদের রাখে, সেখানকার ঠিকানা তাদের দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সামাদার বিটিসি নিউজকে বলেন, ওই মা আগে থেকে এখন অনেক সুস্থ আছেন। আমি তাকে দেখভাল করি সব সময়। যেদিন তিনি এসেছিলেন তার ভীষণ পায়খানা হচ্ছিল; এখন সেটা হচ্ছে না। জানতে পেরেছি তার পরিবার বেশ অর্থশালী। কিন্তু কেন তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে জানি না।

মিল্টন বলেন, আজ শুক্রবার তামান্না নামে প্রিমিয়ার কর্মরত এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা আমাদের এখানে এসেছেন তাকে (ওই বৃদ্ধা) নিয়ে যেতে। তামান্না কোন সঠিক পরিচয় দিতে পারেননি। শুধু বলছেন আমেনা তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমি তাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে দেইনি। বলেছি সঠিক প্রমাণ ও প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া আমি তাকে এখান থেকে ছাড়ব না। কিন্তু ওই নারীর (তামান্না) দাবি আমেনা এখানে থাকলে মারা যাবে।

আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি যদি এখানে থাকলে মারা যায় তাহলে রাস্তায় পড়ে ছিল কেন? এই নিয়ে ওই নারীর সাথে ভীষণ বাকবিতণ্ডা হয়েছে। তবে আমিনা খাতুনের দূরের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তামান্নার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

মিল্টন জানান, তারা তথ্য পেয়েছেন, ওই নারীর নামে ব্যাংকে ৪০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করা আছে। এবং তাদের বেশ সম্পদ ও সম্পত্তিও আছে।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হুমকির মুখে পড়ার কথাও জানান চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের স্বত্তাধিকারী। বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে একে এক ব্যক্তি তুই তোকারি করে বলেছেন, আমরা নিয়ে যাব। আমাকে আরও নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আগের নারীর মতোই তিনিও ওই বৃদ্ধার কোন ধরনের আত্মীয় সেটা বলছেন না।

শেরে বাংলানগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জি জি বিশ্বাস বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার এমন কোন খবর জানা নেই খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। তবে এটা মানবিক বিষয়, আর প্রবীণ হিতৈষী সংঘ থেকেও আমাকে জানাতে পারত। এর আগেও অনেককে এভাবে উদ্ধার করে পুলিশ সেবা দিয়েছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.