বিতর্কিত এমপি-মন্ত্রী নৌকায় চড়বেন না, কঠোর হুঁশিয়ারি শেখ হাসিনা

 

ছবি Online

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : যারাক্ষমতায় থেকে জনবিচ্ছিন্ন, দখলবাজ, নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে সাংগঠনিক ক্ষতি করেছেন, এলাকায় গডফাদারের ভূমিকায় দলকে করেছেন বিতর্কিত, এমন এমপি-মন্ত্রী নৌকায় চড়তে পারবেন না। এ ব্যাপারে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা কঠোর।

 

সদ্য সমাপ্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যক্তিস্বার্থে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তারা এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। তারা দলীয় পদধারী হলে বহিষ্কৃত হবেন। দলীয় নেতা-কর্মী ও এমপিদের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতা ও দলের এমপিদের এ বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে প্রার্থী বাছাইয়ে চমক দিয়ে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ হতে চান তিনি। চার স্তরের রিপোর্ট ও ব্যাপক যাচাই-বাছাই শেষে তিনি তুলে দেবেন দলীয় প্রতীক নৌকা।

দলীয় সূত্রমতে, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর মাত্র নয় মাসের কম সময় হাতে রয়েছে। এ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয় করাই আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বছর আগেই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমানে মন্ত্রী-এমপিদের কে কী করছেন সে তথ্য ছাড়াও তিনি সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। অনেককে ডেকে এনে তিনি সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে ভাবনায় ফেলেছে অভ্যন্তরীণ দলাদলি। দলীয় কোন্দলই আওয়ামী লীগের বিজয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে দলের উচ্চ পর্যায় মনে করছে। জেলায় জেলায় নেতার সঙ্গে এমপির, এমপির সঙ্গে মন্ত্রীর, এমনকি এমপির সঙ্গে নিজ দলের স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।

শুধু এমপিই নয়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবীদের দ্বন্দ্বের চিত্রও এখন প্রকাশ্যে। সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের হারের কারণ হিসেবে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ দুটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সভায় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে একটা কথা প্রচলন আছে, ‘ওকে শোয়াইয়া দাও’। আমাদের দলের প্রার্থীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে সিনিয়র কয়েকজন নেতা। তারা চাননি বলেই আমাদের প্রার্থীদের শোয়াইয়া দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার ধাপে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন। ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপারে তার হাতে কয়েক দফা রিপোর্ট এসেছে। কিছু কিছু এমপি-মন্ত্রীর এলাকায় গডফাদারের ভূমিকা, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের দলে ভেড়ানো, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো, নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা ও এলাকায় খুবই কম যাওয়া, নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিভক্ত করে রাখা, স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্যদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া, চাকরি দেওয়ার কথা বলে নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া ও টাকা ফেরত না দেওয়া, বিরুদ্ধে বললেই হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি বা পঙ্গু করে দেওয়া অথবা জীবন নিয়ে নেওয়া, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং বিদ্যুতের লাইন দেওয়ার নাম করে জনসাধারণের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানির মতো অভিযোগও আছে কোনো কোনো এমপির বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, তাদের এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউপি নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিলেন, যেসব নেতা ও এমপি-মন্ত্রী নিজের বলয় ঠিক রাখতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠে রেখেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে সদ্য সমাপ্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তারা যদি এমপি হয়ে থাকেন বা এমপির জন্য মনোনয়ন চান, আমার হাত থেকে তারা মনোনয়ন পাবেন না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে— জনসম্পৃক্ততা না থাকলে একাদশ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নয়। শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে, তাদের তাঁর (শেখ হাসিনা) হাত থেকে মনোনয়ন দেবেন না।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমাদের বিজয় অর্জন করতে হবে। এজন্য যেখানে যেমন প্রার্থী প্রয়োজন, সেখানেই তাই দেওয়া হবে। যত বড় প্রভাবশালীই হোন না কেন, বিতর্কিতরা নৌকা পাবেন না।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.