বাজেটে তামাকপণ্যের কর বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর নিকট এমপি মনসুরের চিঠি

এসিডি প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে সকল তামাকজাত পণ্যের প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি (ডিও লেটার) দিয়েছেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মো. মনসুর রহমান।

গতকাল সোমবার (২৩ মার্চ) রাতে তার রাজশাহীর বাসায় উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ অর্থমন্ত্রীকে ডিও লেটার প্রদানের বিষয়ে কথা বলেন। এরপর ওইদিন রাতেই তিনি অর্থমন্ত্রী বরাবর এ ডিও লেটার প্রদান করেন।

ডিও লেটারে তিনি আসন্ন বাজেটে উচ্চহারে তামাকের কর কেন বাড়ানো প্রয়োজন তার যুক্তি তুলে ধরে প্রতিবছর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেন যাতে তামাকপণ্য ক্রমশ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এছাড়া তিনি অবিলম্বে একটি কার্যকর শুল্কনীতি প্রণয়ণেরও প্রস্তাব ডিও লেটারে উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রীকে প্রদান করা ডিও লেটারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৫ বছরের উর্ধ্বে জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর হার ৩৫.৩ শতাংশ যা ২০০৯ সালে ছিল ৪৩.৩ শতাংশ। স্বল্প সময়ে তামাকের এই ব্যবহার হ্রাস সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আমরা সফলতার সাথেই এগিয়ে চলেছি। তারপরও তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার লোকের অকাল মৃত্যু হচ্ছে।

বর্তমানে ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন যার মধ্যে ১৮ শতাংশ (১ কোটি ৯২ লক্ষ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২০.৬ শতাংশ (২ কোটি ২০ লক্ষ) ধোঁয়াবিহীন তামাক (জর্দা, গুল, খৈনী, সাদাপাতা) ব্যবহার করেন।

এই ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী তামাকপণ্য ব্যবহার করে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে এ খাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাস পায়।

এই সংসদ সদস্য আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে তামাকপণ্য খুবই সহজলভ্য। পৃথিবীর যেসব দেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত সস্তা বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এই তামাকপণ্য সহজলভ্য হওয়ায় তামাকের ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমছে এবং তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়-ক্ষতি বেড়েই চলছে। অথচ কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়ালে তামাকের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং একইসাথে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পায়।

তিনি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘২০৪০ সাল নাগাদ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন-
সিগারেটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪ টি মূল্যস্তর (৩৭টাকা, ৬৩ টাকা, ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা) বিলুপ্ত করে ২টি মূল্যস্তর ( নিম্নস্তর ৬৫ টাকা ও প্রিমিয়ার স্তর ১২৫ টাকা থেকে তদুর্ধ্ব) নির্ধারণ করে বিড়ির ফিল্টার ও ননফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেয়া।

পাশাপাশি সকল তামাকপণ্যের প্যাকেট/কৌটা প্রতি সম্পূরক সুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট আকারে আরোপ করা হোক যাতে ক্ষতিকর এসব পণ্যের প্রকৃত মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।

তিনি ডিও লেটারে প্রতিবছর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেন যাতে তামাকপণ্য ক্রমশ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। অর্থমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে তিনি অবিলম্বে একটি কার্যকর শুল্কনীতি প্রণয়ণেরও প্রস্তাব করেন।

বার্তা প্রেরক: আমজাদ হোসেন শিমুল, মিডিয়া ম্যানেজার, এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.