বাগেরহাটে সামাজিক দুরত্ব মানছে না অধিকাংশ মানুষ, প্রশাসনের সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান


বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের সাথে সামাজিক দূরত্ব বাড়াতে প্রশাসনের নেওয়া উদ্যোগ কাজে আসছে না। শহরের মানুষ কিছুটা মানলেও গ্রামের মানুষ মোটেই মানছে না। দিনের বেলাতে মোড়ে, হাট বাজারে ভিড় না থাকলেও সন্ধ্যায় ভিড় বাড়ছে এবং তা চলছে রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত। জেলা প্রশাসন বা কোন বেসরকারী সংগঠন সহায়তা দিতে আসলে সেখানে সামাজিক দুরত্ব না মেনে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন।

এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ যেভাবে ঘর ছেড়ে বাড়ির বাইরে আসছে তাতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কতটা রোধ করা যাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাগেরহাটের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা, মোড় ও হাটবাজারের জনসমাগম কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত দুইদিন সরজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বাগেরহাট জেলা নয় উপজেলা অধিকাংশ এলাকার একই চিত্র পাওয়া গেছে। সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ঘর বন্দি রাখতে শুরুতেই বাগেরহাটের প্রশাসনসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো স্থানীয় জনগনকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবারই ঘরে থাকা উচিত। রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা জানছি কিন্তু মানছি। সরকারের নির্দেশনা মেনে চললে আমরা তাড়াতাড়ি আগের অবস্থায় ফিরতে পারব বলে মনে করেন এই ব্যক্তিরা।

এ প্রসঙে বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ উদ্দীন হায়দার বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দুরত্বের বিকল্প নেই। বাগেরহাটে অনেক এলাকায় সামাজিক দুরত্ব মানুষ মানছেন না। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা বিবেচনা করে আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য খারাপ সময়। এই সময়টায় আমাদের সবার ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বাগেরহাটের বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। সবাইকে আরও সচেতন করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সেচ্ছাসেবীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বাগেরহাট সদর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাগেরহাটে ভারতসহ ৩৮ টি দেশের চার হাজারের অধিক মানুষ সম্প্রতি বাগেরহাটে ফেরেন। ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তাদের মধ্যে আমরা এক হাজার পাঁচশ ১৭ জনকে ১৪ দিনের হোম কোরেন্টিনে নেওয়া হয়। এরমধ্যে এক হাজার ২১৮জনের ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিরা হোম কোরেন্টিনে আছেন। এই এপ্রিল মাসের প্রথম দশদিন ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে ডেঞ্জার সময়। এই সময়টা সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যারা যার বাড়িতে অবস্থান করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাগেরহাটের মানুষকে সামাজিক দুরত্ব ও ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। অতিপ্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। সব ধরনের জনসমাগম রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। ভিড় দেখলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেয়ে তাদের বোঝাচ্ছে। তারা চলে আসার পর আবার স্থানীয়রা আবার জড়ো হচ্ছেন। নিজেরা যদি সচেতন না হন তাহলে চলবে কি করে। আসুন সবাই সচেতন হয়ে ঘরে থাকি করোনা ভাইরাসকে না বলি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের মাঠে কাজ করা একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাগেরহাট শহরের মানুষ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলছে। তবে গ্রামের মানুষ দিনের বেলায় বাড়িতে থাকলেও বিকেল গড়ানোর সাথে সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে মোড়ে বা বাজারে যাচ্ছেন। সেখানে ভিড় করে গল্প করছেন চা পান করছেন। সামাজিক দুরত্বও মানছেন না। তবে এই মানুষদের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষণীয় তাহলো ছেলে বুড়ো সবাই মুখে মাক্স পরে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন।

আমরা এসব মানুষদের করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বোঝাচ্ছি। তারাও বুঝছেন কিন্তু মানছেন না। তারা চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ যাতে সামাজিক দূরত্ব মেলে চলে তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও বেশি প্রচারণা চালানো হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.