বাগেরহাটে বেপরোয়া প্রতিপক্ষ, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রাত জেগে পাহারা

বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার পিপড়াডাঙ্গা এলাকায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত জমি জোর করে দখল নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী একটি পক্ষ।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরে বিরোধপূর্ণ ওই জমি দখল নিতে জমির প্রকৃত মালিক মোঃ জাহিদুল ইসলাম ও তার পরিবারের উপর হামলা ও নানা প্রকার হয়রানির চেষ্টা করছে।

যে কোন সময় প্রতিপক্ষ সাইফুল হাওলাদার ও হেলাল সরদারসহ অন্যরা ওই জমি জোরপূর্বক দখলে নিতে পারে এমন অভিযোগ করেছেন মোঃ জাহিদুল ইসলাম ও তার পরিবার।

শুধু জাহিদুলের জমি নয় তার প্রতিবেশী আব্দুস সোহবান বাওয়ালীর জমিও দখলের চেষ্টা করছেন সাইফুল ও হেলালরা। জমি রক্ষা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন পরিবার দুটি।

প্রাইভেটকার চালক মোঃ জাহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমার বাবা মৃত মোঃ জোহর আলী স্থানীয় হেমন্ত কুমার মন্ডল ও বসন্ত কুমার মন্ডলের কাছ থেকে ১৯৮৮ সালের ৯ এপ্রিল চিতলমারী উপজেলার কিসমত পিপড়াডাঙ্গা মৌজায় সাড়ে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেন। তারপর থেকে এই পর্যন্ত আমরা এই জমি ভোগ দখল করছি। আমাদের নামে এই জমির নামজারি (মিউটেশন) রয়েছে।

উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারস্থ এই জমিতে আমাদের বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে স্থানীয় সাইফুল হাওলাদার, হেলাল সরদার ও রফিকুল ইসলাম আমাদের জমি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা এই জমির মধ্যে ৪ শতক জমি দলিল করেছে বলে দাবি করেন।

আমরা উপায়ন্তুর না পেয়ে আদালতের শরনাপন্ন হই। আদালত জমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তারপরও জমি দখল করতে একাধিকবার ওরা আমাদের উপর হামলা করেছে। আমরা আমাদের জমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা চাই। বৈধভাবে জমি ক্রয় করে যদি ভোগ করতে না পারি তাহলে আমরা কোথায় যাব।

মৃত মোঃ জোহর আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ৩২ বছর ধরে স্বামী সন্তান নিয়ে এই জমিতে ঘর করে বসবাস করছি। কিন্তু সাইফুল হাওলাদার ও হেলালরা আমাদের জমি দখলে নিতে উঠেপরে লেগেছে। কয়েকদিন রাতেও আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে। জমি বাঁচাতে আমরা রাতে ঘুমাইনা, সন্তানদের নিয়ে রাতে জেগে থাকি। কারণ তারা খুব বেপরোয়া রাতে এসে আমাদের জমিতে ঘর তুলতে পারে। প্রশাসনের কাছে আমাদের ভোগের নিশ্চয়তা চাই।

স্থানীয় তপন বিশ্বাস বলেন, ছোট বেলা থেকেই দেখছি কালিগঞ্জ বাজারের পশ্চিমপাশের এই জায়গায় জাহিদুলরা বসবাস করেন। কয়েক বছর আগে জমিতে ভবন করে ভাড়াও দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন যে সাইফুলরা জমি দাবি করছে আমরা জানিনা।

জাহিদুলের ভাড়াটিয়া মটরসাইকেল মেকানিক রন বিশ্বাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক বছর আগে জাহিদুল ভাইয়ের কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে এখানে মটর সাইকেলের গ্যারেজ করেছি। নিয়মিত জাহিদুল ভাইকে ভাড়াও পরিশোধ করি।

স্থানীয় আব্দুস সোহবান বাওয়ালী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জাহিদুলের বাবা জোহর আলী ও আমি দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি এই জমি ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে সাইফুল হাওলাদার, হেলাল সরদার ও রফিকুল ইসলাম আমার জমির মধ্যে সাড়ে তিন শতক জমি দাবি করেন। আমাকে জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেন।

সাইফুল হাওলাদার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি বেগমের ভাই হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলে না। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের শরনাপন্ন হয়েছি। আদালত জমির উপর স্থিতিবস্থা জারি করেছেন, তারপরও সাইফুল ও তার লোকেরা আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছেন। আমরা দুই পরিবারই একাধিকবার আইনজীবীদের মতামত নিয়েছি। আসলে তারা কোন জমি পাবে না। শুধু ক্ষমতার জোরে এই জমি দখল করতে চায়।

সাইফুল হাওলাদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি এবং হেলাল সরদার হরেন্দ্রনাথ মন্ডল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১৭ সালে ৪ শতক জমি ক্রয় করেছি। হরেন্দ্র নাথ মন্ডলের নামে এই জমির এসএ ও বিআরএস পর্চা রয়েছে। আমাদের দলিল করা জমি ভোগ করব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জমি ক্রয়ের পরে জমি বুঝে নিতে চাই, জাহিদুল ইসলামরা আমাদের নামে উল্টো অভিযোগ করেছেন।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালত যার পক্ষে রায় দিবে তিনি জমি ভোগ করবেন। কেউ যদি জোর পূর্বক জমি দখলের চেষ্টা করে এবং আমাদের কাছে এমন অভিযোগ আসে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.