বাগমারায় আমের ফলন কমে দাম বেশী

বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারা ও তার পাশ্ববর্তি এলাকায় এবারে আমের ফলন কম হবার কারণে আমের দাম বেড়েছে। এবারে আম চাষে আবহাওয়া অনুকূলে না হওয়ায় ফোটা মুকুল ও কড়ালী আম ঝরে পড়ায় আমের ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। তবে বাজারে গুটি আমের সাথে গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বেচা-কেনা চলছে।
বাজারে প্রতি বছরের জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝিতে এলাকার বাজারে ও পথে-ঘাটে আমে ভরপুর থাকে। কিন্তু এবারে সেই দৃশ্য নেই। এ অবস্থায় বাজারে আমচাষীরা বেশী দামে পেলেও ক্রেতাদের মন খারাপ।
জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চল নামে খ্যাত রাজশাহীর বাগমারা ও তার পাশ্ববর্তি এলাকায় প্রচুর পরিমান সুস্বাদু আমচাষ হয়ে থাকে। এলাকার আমের চাহিদা মিটিয়ে এলাকার আম বাইরে রপ্তানি হয়ে থাকে। এলাকার আমচাষিরা মওসুমের আম বিক্রি করে সারা বছরের আয়-রোজগার করে রাখেন। কিন্তু এ বছর অতি খরা ও কম শীতের কারণে আসানুরুপ আমের ফলন হয়নি। আমের ফলন কম বলে থেমে নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ঐতিহ্যবাহী আমের বাজার কামারপাড়ার আমের আড়ত। উপজেলার শেষপ্রান্তে কামারপাড়া বাজারে জমে উঠেছে আমের বাজার।
জেলার বানেস্বর বাজারের পর এলাকার অন্যতম বৃহতম বাজার কামারপাড়ায় দিন-রাত চলছে আড়তে আম-কেনা-বেচা। বাজারের ফারহানা আম আড়ত, সততা আড়ত, মোস্তফা আড়ত, ভাই ভাই আড়তসহ ৩০/৪০টি আমের আড় রয়েছে।
ফারহানা আড়তের মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, এবারে দেশ ব্যাপি আমের ফলন কম। তবে যে হারে কম হয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে, তাতে বাজারে বেশ আম আমদানী হচ্ছে। বাজারে গুটি আম এর পর পর গোপালভোগ, হিমসাগর আমের আমদানী চলছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে আম ব্যবসায়ী আম ক্রয় করতে আসছেন। বর্তমানে গোপালভোগ ও হিমসাগর বাজার মূল্য প্রকার ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে হরেক রকম আম থাকলেও ভেজাল রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তার মতে ক্ষেরসাপাত আম, আম রুপালীসহ বেশ কিছু আম এখনো পাকার সময় হয়নি। এসব কিছু মুনাফাখোর লোক বেশী সুবিধার জন্য আগে নামিয়ে বিক্রি করছে। এগুলো পরখ করে কিনতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তার নমে একটি অনলাইন ক্রয় বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। তিনি প্রয়োজনে ০১৭৪৫৩১৮৯৬১ নম্বারে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
এদিকে আমের ফলন কম হবার কারণে এলাকার আমচাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। উপজেলার বালানগর গ্রামের আমচাষী নায়েউল্লা, এরশাদ আলী, আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, প্রতি বছর আম বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়ে সারা বছর তারা সংসার চালান। এবারে বাগানে তেমন আম নেই। আম কম থাকায় বিক্রি করতে না পারায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
একই ভাবে গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে আম বেশী থেকেও আমের ন্যায্য দাম না পেয়ে তিনি ক্ষতির সন্মুখী হয়েছিলেন। আর এবারে আম না ধরায় একই রকম ক্ষতির সন্মুখীন। তার এবারে একটি বাগানের ৪০/৫০টি আম গাছ। বিগত দিনে ওই বাগানে বেশ টাকা আসলেও এবারে মাত্র ২০ হাজার টাকার আম বিক্রি হয়েছে। এছাড়া তার গুটি ও ফজলি আম বাগানে একে বারে আম কম।
আম কম হবার কারণে ব্যবসায়ীরা বাগান ক্রয় করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। ব্যবসায়ীদের বরাদ দিয়ে তিনি জানান, বাগানের বেশী ভাগ গাছে আম কম, কম আম নামাতে যে পরিমান শ্রমিক খরচ হবে তাতে আমে লাভ হবে না বলে তারা না করছেন। এতে করে এবারে আমের দাম ভালো হলেও আমের ফলনে আমচাষীরা লোকশান গুণছেন বলে জনিয়েছেন।
এ ব্যপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমের আমদানীতে কিছুটা কম হবার কারণে আমের দাম বেশী। তবে বাজারে এখনো কালুয়া ক্ষেরসাপাত, লকনা, আমরুপালী, ফজলিসহ বেশ কিছু উন্নত জাতের আম আসতে দেরী। পুরা আম আসা শুরু হলে দাম কমে যাবে। এছাড়া আম যে একে বারে ফলন কম তা বলা যাচ্ছে না, কেন না এখনো বাজারে পুরা আম আমদানী শুরু হয়নি। পুর আম আসা শুরু হলে আমের ফলন কি রুপ হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণে হিসাব মিলবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.