বাগমারার লিখড়া বিলে সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছচাষ ভাগ্য বদলেছে দেড় হাজার কৃষকের
বাগামারা প্রতিনিধি: বাগমারার দ্বীপপুর ইউনিয়নের লিকড়া বিলে সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছচাষ করে দেড় হাজার কৃষক পরিবারের ভাগ্য বদলে গেছে। বিল সংলগ্ন পাঁচটি গ্রামের কৃষকেরা তাদের জমিতে ধান ও মওসুমী ফসল চাষের সাথে পরিকল্পিতভাবে মাছচাষ করে তারা এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
ঘুরে গেছে তাদের ভাগ্যের চাকা। অভাব-অনটনে ভরা ওইসব কৃষকদের সংসারে এখন ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের লিকড়া বিলের জমিতে সাধীনভাবে ফসল চাষের সুবিধার জন্য ২০০৭ সালের দিকে প্রথমে দশ বছরের জন্য এলাকার আটশতাধিক কৃষক পরিবার মিলে বিলটি লীজ নেন এবং তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘লিকড়া বিল মৎস্যচাষ প্রকল্প’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ওই প্রকল্পের পক্ষ থেকে ওই বিলে কৃষকদের জমিতে ফ্রি সেচ সুবিধা দিয়ে সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মওসুমী ফসল চাষের সাথে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। জমিতে ফি চাষাবাদের সুযোগ পাওয়ায় প্রথম দশ বছরেই প্রকল্পের সদস্যদের পাশাপাশি এলাকার কৃষকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছেন।
সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছ চাষ প্রকল্প ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চলতি সাল থেকে আবারো দশ বছরের জন্য নতুনভাবে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে এবার প্রকল্পের সদস্য সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুন বেড়েছে।
লাভজনক এই প্রকল্পের সাথে এবার নানসোর, হাসানপুর, চকহরি নারায়নকুন্ডু, খাঁপুর ও লাউবাড়িয়া এই পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ কৃষক পরিবার যুক্ত রয়েছেন। লাউবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক সামশুল আলম, হাসানপুর গ্রামের বিধান চন্দ্র এবং নানসর গ্রামের মোজাম্মেল হক ও আশরাফুল ইসলামসহ বিল সংলগ্ন এলাকার একাধিক কৃষক এ প্রতিবেদককে জানান, এই বিলের জমিতে সুবিধামত সেচ দিয়ে এবং অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের জমিতে আলু, পেঁয়াজ, ভূট্রা এবং বোরো ও আউশ ধান চাষের সুবিধার জন্য সম্মিলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় উভয় ক্ষেত্রেই তারা উপকৃত হচ্ছেন।
লাইবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, ওই বিলে তার ৮০ বিঘা জমি রয়েছে। সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছ চাষ করে গত দশ বছরে তিনি ব্যাপক লাভ পেয়েছেন। তার মতো একই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম, মজিবর রহমান, আব্দুস সামাদ ও ফয়েজ আলী এবং নানসর গ্রামের খলিল হাজী, সাদেক হাজী, আনিছার রহমান ও মুনছুর রহমানসহ অনেক কৃষক পরিবারের সংসারে বর্তমানে সুদিন ফিরে এসেছে বলে তারা জানান।
এছাড়া নানসর গ্রামের গরীব কৃষক আমজাদ হোসেন তার তিন মেয়েকে এবং ওসমান আলী তার দুই মেয়েকে এই প্রকল্পের লাভের অর্থ দিয়ে সম্প্রতি বিয়ে দিতে পেরে নিশ্চিন্ত হয়েছেন এবং তারা এখন সুখের মুখ দেখতে শুরু করেছেন।লিকড়া বিল মৎস্যচাষ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান দুলাল বলেন, লিকড়া বিলে যাদের মালিকানা জমি রয়েছে তাদের সমস্ত জমিতে ফি সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিলের মধ্যে মোট ১৪টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য চারটি সেলোমেশিনও স্থানপন করা হয়েছে। এতে বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকেরা তাদের জমিতে কম খরচে ফসল উৎপাদনের পাশাপশি সম্মিলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় উভয় ক্ষেত্রেই উপকৃত হচ্ছেন। বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান লিকড়া বিলের কৃষকদের এই উদ্যোগ প্রসংশার দাবিদার বলে মন্তব্য করেন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.