বাগমারায় ধানের দাম কমলেও চালের দাম কমেনি


বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় সরকারী ঘোষণার পর পরই ধানের দাম মন প্রতি ১৫০/- টাকা থেকে ২০০/- টাকা কমেছে। চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তের খবরে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে এলাকায় ধানের দাম। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানেই বাজারে ধানের দাম কমেতিতে। তবে সে তুলনায় কমেনি চালের দাম। ধানের দাম কমলেও বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।
উপজেলার অন্যতম বড় ধানের বাজার সদর উপজেলার সদর ভবানীগঞ্জ হাটে গত শুক্রবার বেশী ধানের সরবরাহ হয়। হাটে ধানের সরবরাহ বেশী দেখে ব্যবসায়ীরা বেশ কিছুক্ষণ ক্রয় বন্ধ রাখে।
ধান ক্রেতারা জানান, গত হাটে মাহাজনদেরকে ধান দিয়ে ওই ধানের দাম তারা পরিমিত পায়নি। সরকারি ভাবে দাম কমার সিদ্ধান্তে অনেক মাহাজনের গুদামে ভ্রাম্যমান আদালতের ভয়ে তারা ধান ক্রয করছেন না। হাটে আগে (শুক্রবার) ১ হাজার চার শত থেকে দেড় হাজার টাকায় ধান ক্রয় করা হয়েছে। মহাজনদের চাহিদা না থাকায় তারা ধান বেশী দামে ক্রয় করতে পারছেন না।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি মন মোটা (৭৫) জাতের ধানের দাম কমেছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারের ধান ক্রেতা ইনতাজ আলী জানান, কয়েক দিন আগেই প্রতি মন (৭৫) জাতের ধান বিক্রি হতো ১হাজার ৪ শত ৫০/- টাকা থেকে ১ হাজার ৫ শত টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১ শত থেকে ১ হাজার ২ শত টাকায়। বিআর-৫১ ধান ২ হাজার টাকা থেকে নেমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। তিনি জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়লেও মিলের মালিকেরা ধান কেনা কমিয়ে দেয়ায় ধানের দাম কমতে শুরু করেছে।
বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক দেউলিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন মিলের মালিকেরা। তারা ইচ্ছা মতো ধানের দাম নির্ধারণ করে থাকেন, বাধ্য হয়েই তাদের সেই দামে ধান বিক্রি করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবং চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে নিয়ে আসায় মিলের মালিকেরা ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই কমতে শুরুতে করেছে ধানের দাম।
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। নতুন শুল্কহারে চাল আমদানি করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারবেন আমদানিকারকেরা। এদিকে বিষয়টি প্রকাশ হবার পর পর বাজারে ধানের দাম দাম মন প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কমলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।
গতকাল উপজেলার বিভিন্ন বাজারে চালের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ধানের দাম কমার প্রভাব পড়েনি। ভবানীগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ী আশিকুর, সহেল, আব্দুল মান্ননসহ অনেকে বিটিসি নিউজকে জানান, তারা শুনেছেন ধানের দাম কমেছে। কিন্তু মিলের মালিকদের কাছে আগের দামেই তাদের চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বাজারে চালের দাম কমেনি। তিনি জানান, বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ৭৫ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আগেও এই দামে চাল বিক্রি হতো বলে তারা জানান।
বাজারের সুধিজনদের সাথে কথা হলে তারা বিটিসি নিউজকে জানান, সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে বাজারে ধানের দাম কমেছে, চালের বাজারও সামান্য পরিমান কমেছে। তবে যে হারে ধানের দাম কমেছে সেই ধারে চালের দাম কমেনি বলে তারা দাবি করেছেন।
এদিকে ধান বিক্রেতা স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, এলাকার বেশী ভাগ লোক কৃষি কাজে জড়িত। গত কয়েক বচর ধরে তারা কৃষি কাজে লোকশান গুনেছেন। এবারে পেঁয়েজ, আরুর দাম ভালো পেলেও গত মৌসুমের ধানের খরচে ধান চাষে লাভ হচ্ছে না বলে তারা দাবি করেন। হঠাৎ করে এবারে আবার ধানের দাম কমতিতে তারা আসন্ন বোরো ধান চাষে তাদের মুলধন হারাতে হবে বলে দাবি করেছেন। তারা ধান চাষে বাড়তি খরচ গুনছেন। বিগত দিনের সার, কীট নাশক, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়তির সাথে শ্রমিকের মজুরী বেশীতে ধান চাষে লাভ মি বে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মো: আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.