বর্ষবরণে প্রস্তুত রাবির চারুকলা

ছবি : সৈয়দ নাবিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসায় মিশে আছে ‘বাংলা নববর্ষ’। তাই বর্ষবরণে উন্মুখ বাঙালি নানান প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে অপেক্ষা করছে পহেলা বৈশাখের। সার্বজনীন এই উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলাতেও। সেখানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
আগামী শুক্রবার রাত পেরুলেই পহেলা বৈশাখ। বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাত-দিন এক করে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদেরই প্রচেষ্টায় আবহমান বাংলার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে অনুষদটির আঙ্গিনা।
সরেজমিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্ত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতিতে সেখানকার শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবারই প্রাণে যেন বেজে চলছে রবীন্দ্রনাথের এই লাইনগুলো- ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’।
আবেগের যেন কমতি নেই কারো। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাংলার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে হাতপাখা, মাছ, প্রজাপতিসহ নানা রঙের মুখোশ তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মুখোশ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড তৈরি চলছে। শিক্ষার্থীরা মিলে আঁকছেন নানারকম ছবিও। কেউ আবার ব্যস্ত ডামি তৈরিতে।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ষাড়’ ও ‘পায়রা’। বাঙালির চিরন্তন এ উৎসব ঘিরে নতুন সাজে এরইমধ্যে সেজেছে চারুকলা বিভাগ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চারুকলা অনুষদ পর্যন্ত রঙিন আল্পনা আঁকার পরিকল্পনা রয়েছে। পহেলা বৈশাখের আগেই এ কাজ শেষ করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

প্রস্তুতির কাজে ব্যাস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে রাবি সাজে ভিন্ন সাজে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও জনসাধারণে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থান। মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে যেন প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যায়। কারণ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মূল আকর্ষণই থাকে চারুকলা অনুষদ ঘিরে। তাই এবারও অনুষদ প্রাঙ্গনে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

জানা যায়, এদিন নানা কর্মসূচি পালন করতে চলেছে চারুকলা অনুষদ। পহেলা বৈশাখের সকালে অনুষদের সামনে থেকে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। এ শোভাযাত্রার বিশেষত্ব হলো- ভিন্ন আঙ্গিকে আবহমান বাংলার চিরায়িত সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। এখানে। এছাড়াও থাকছে যন্ত্রসঙ্গীত, আবৃত্তি, নাটক ও নৃত্যানুষ্ঠান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুশিল্প বিভাগের শিক্ষক ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীন চৌধুরী বলেন, বৈশাখে বাঙালির সংস্কৃতিকে শতভাগ ফুটিয়ে তুলতে সবকিছুই করা হয়। এরইমধ্যে বর্ষবরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরা দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করছে। তাই এবারও আনন্দঘন পরিবেশে দিনটি উদযাপন করা যাবে বলে আশা করছি।

গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী উর্মিলা ঊর্মি বলেন, পহেলা বৈশাখ নিয়ে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের বাড়তি অনুভূতি কাজ করে। বরাবরের মতো আমাদের সংস্কৃতির সবকিছুই থাকবে এবারের আয়োজনে।

বর্ষবরণ উপলক্ষে পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রাবির বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বাংলা, নাট্যকলা ও সঙ্গীত, আইন, মার্কেটিং, ফোকলোরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলো বিভাগের পক্ষ থেকে রয়েছে বর্ষবরণের ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.