বদলি ঠেকাতে ঢাকায় দৌড়ঝাপ আরডিএ চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আনওয়ার হোসেনের বদলির আদেশ আসে। বিধি মোতাবেক সাবেক কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের কথা থাকলেও বদলি ঠেকাতে ঢাকায় দৌড়ঝাপ শুরু করছেন তিনি।
একটি বিস্বস্ত সূত্র জানায়, আরডিএ’র চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন বদলি হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। তাঁর পরিবর্তে আরডিএতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জিয়াউল হক (যুগ্ম সচিব)। চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রপতির আদেশ ও উপসচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি আমলে না নিয়েই আরডিএ থেকে নিজের বদলি ঠেকাতে দেন-দরবার ও দৌড়ঝাপে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আরডিএর চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন। ইতোমধ্য ঢাকার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে দপ্তরে চালাচ্ছেন তদবির।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি বিশেষ অনুরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল হক এখনও যোগদান করেননি আরডিএ কার্যালয়ে। এদিকে আনওয়ার হোসেনও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অদ্যবধি যোগদান করেননি।
অভিযোগ উঠেছে, মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বাইপাস রোডের পাশেই প্রান্তিক আবাসিক এলাকায় প্রায় ২০০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে। একেকটি প্লট দেড় কাঠা থেকে ছয় কাঠা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে। কাঠা প্রতি সেখানে প্লটের মূল্য প্রায় ১৫ লাখ (আরএডি নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী) বলে জানা গেছে। এছাড়াও নগরীর তালাইমারী এলাকায় চেয়ারম্যান মনোনীত চার্জশীটভুক্ত আসামির হাতে রয়েছে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সটির কাজ। যার প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান। তাকে দিয়ে ওই কমপ্লেক্সটির পরিচালনার কাজ করাচ্ছেন তিনি। প্রথমে ৩০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে আরও কয়েক কোটি টাকার কাজ বৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছেন কামরুজ্জামান। ওই প্রকল্পের কাজে নয়ছয়ের অভিযোগও রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সহকারি প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্পের মুল্য বৃদ্ধির লক্ষে আবেদনটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। ফাইলটি যাচাই-বাছাই শেষে একনেকে পাশ হলে বলতে পারবো কত টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে আরডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন আনওয়ার হোসেন। আরডিএ-তে আছেন তিন বছর যাবত। তবে এই তিন বছরে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হয়নি।
আরডিএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, বিধি মোতাবেক চেয়ারম্যান তার ক্ষমতা হস্তান্তর করেন দপ্তরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। যেমন, ২০১২ সালে আব্দুর রহিম নামের একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সময়ে চেয়ারম্যান অপূর্ব কুমার বিশ্বাস (অতিরিক্ত সচিব) তার বদলি হওয়ার পর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যান। এদিকে আদেশ হওয়ার পরপরই তিনি দৌড়ঝাপে ব্যস্ত। এতে আরডিএ’র বিভিন্ন মিটিং, দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জিয়াউল হক (যুগ্ম সচিব) বলেন, ‘তাঁর (মো. আনওয়ার হোসেন) মেয়ে রাজশাহীতেই পড়াশোনা করছে এবং তার পরীক্ষা চলমান। মেয়ের পরীক্ষা ও কিছু পারিবারিক সমস্যার কারণ উল্লেখ করে তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন একটু থেমে যোগদান করার জন্য। মূলত: উনার পারিবারিক সমস্যার কারণেই আরডিএতে যোগদান করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি আদেশ বা নির্দেশনা মানতে আমি বাধ্য। খুব শীঘ্রই যথাসময়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবো বলে আশা করছি।’
বদলির আদেশ অমান্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাপের বিষয়ে জানার জন্য বার বার ফোন করা হয় আরডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেনকে। বার বার ফোন করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাঁর মুঠোফোনে একটি ক্ষুদে বার্তা প্রদান করা হয়।
তবে মো. আনওয়ার হোসেন নিজ কর্মস্থলে যোগদান না করা এবং আরডিএ কার্যালয় না ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-২) কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘কেউ যদি আমার অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদান না করে তবে তাঁকে জোর করে আমার প্রতিষ্ঠানে আনার এখতিয়ার নেই। তবে যে আমার প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আদেশ মানছেন না তাঁর ব্যাপারে আমি খুব শীঘ্রই পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.