বঙ্গবন্ধু’র প্রস্তাবেই ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু : প্রধানমন্ত্রী

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের ওপর একটি বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো এবং ১৯৪৭ সালে করাচিতে একটি শিক্ষা সম্মেলন হয়, সেখানেই ঘোষণা হয়েছিল যে উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
কিন্তু পাকিস্তান নামের যে দেশটি হয়েছিল তার ৫৬ ভাগের বেশী ছিলাম আমরা বাঙালি ও বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ঘোষণাটা পূর্ববঙ্গে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। ওই সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গিয়ে তারা প্রতিবাদ করে। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তাঁরই প্রস্তাবে এই ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু।’
আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে একুশ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মূলত আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন। যারা আমাদের ভাষার ওপর আঘাত করে, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্রথম তিনি অন্যান্য ছাত্রদের সংগঠন এবং তমদ্দুন মজলিশকে নিয়ে একটি সভা করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হবে। সেই সভা থেকেই সিদ্ধান্ত হয় একটা তারিখ ঘোষণা করে আন্দোলন শুরু হবে। এটা ছিল ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখ। ১১ মার্চ ধর্মঘট ডাকা হয়। ধর্মঘট করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক নেতা গ্রেফতার হন। আন্দোলনের ফলে শাসকরা কিছু দাবী মেনে নিয়ে ১৫ মার্চ অনেককে ছেড়ে দেয়। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সভা হয়, সেখানে সভাপতিত্ব করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  ভাষা সংগ্রাম যে অব্যাহত থাকবে এই ঘোষণা ও ছাত্রদের ওপর যে গুলি হয় তার তদন্ত দাবি করা হয় সেখানে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করছেন তিনি। সেখানে এ সংক্রান্ত আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকেই রক্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও শাসকরা বাংলাকে মাতৃভাষা করেনি। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এসেই কিন্তু বাংলাকে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা করে। ভাষা শহীদরা রক্ত দিয়ে শুধু মাতৃভাষায় কথা বলা নয়, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরী করে দিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবনের প্রতিটা স্তরেই আন্দোলন সংগ্রাম করে সব অর্জন করতে হয়েছে। কেউ সেধে কিছু দেয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটা ছিল সামজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’ এখানে মূলত আমাদের মৌলক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। কাজেই ভাষা আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্য স্থির করে আন্দোলন করে যান এবং আমরা একটি স্বাধীন দেশ অর্জন করি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে কানাডাপ্রবাসী সালাম-রফিক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার প্রস্তাব করেন ইউনেস্কোতে। কিন্তু জাতিসংঘের কোনও সদস্য রাষ্ট্রের এটা প্রস্তাব করার বলে তারা। আমরা এটা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম জাতিসংঘে প্রস্তাব দেওয়ার। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এই স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে সব দেশে এটি পালিত হচ্ছে। সেই থেকে ২১ ফেব্রুয়ারী আমাদেরই।’
এবার যারা একুশে পদক পেলেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ অবদান রেখে আপনারা আজ এই পুরষ্কারে ভুষিত হয়েছেন। আপনাদের কাছ থেকেই আগামী প্রজন্ম অনেক শিক্ষা নিতে পারবে। কারণ এই দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গবেষণা,সংস্কতি চর্চা, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কাজে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি মনে করি এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা না, এটা জাতির জন্য সম্মাননা, দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা।’
বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা বাঙালি। বাংলা আমাদের দেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সাথে চলবে। কারও কাছে হাত পেতে নয় আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্নমর্যদা নিয়ে চলবো।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ২১ বিশিষ্ট নাগরিকদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এ বছর একুশে পদক প্রাপ্তরা হলেন: ভাষা আন্দোলনে মরহুম মোতাহার হোসেন তালুকদার (মোতাহার মাস্টার) (মরণোত্তর), মরহুম শামছুল হক (মরণোত্তর) এবং মরহুম আফসার উদ্দিন (মরণোত্তর)।
শিল্পকলা বিভাগে (সঙ্গীত) বেগম পাপিয়া সরোয়ার, অভিনয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ এবং সালমা বেগম সুজাতা (সুজাতা আজিম), নাটকে আহমেদ ইকবাল হায়দার, চলচ্চিত্রে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, আবৃত্তিতে ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আলোকচিত্রে পাভেল রহমান।
মুক্তিযুদ্ধে গোলাম হাসনায়েন, ফজলুল রহমান খান ফারুক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুমা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর)। সাংবাদিকতায় অজয় দাসগুপ্ত, গবেষণায় ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় বেগম মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান। ভাষা এবং সাহিত্যে এই সম্মাননা পেয়েছেন কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী এবং গোলাম মুরশিদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.