প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ঝড়ে পড়া প্রধান অন্তরায়

জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি: সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ঝরে পড়া একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গনোপযোগী শিশুরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষ হওয়ার পূর্বে মধ্যবর্তী যে কোনো সময়ে যে কোনো শ্রেণি থেকে যদি বিদ্যালয় ত্যাগ করে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় তখন তাকে ঝরে পড়া বলে। ঝরে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় রয়েছে। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের অকালে ঝরেপড়া প্রতিরোধ বহুমুখী পদক্ষেপ দেখা গেলেও এখনো শতভাগ সফলতা আসেনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনক।ঝরেপড়া রোধে সরকার বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরন,উপবৃত্তি প্রদান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও মিড ডে মিল চালু করার পরও কাঙ্খিত সফলতা আসছে না।

এ ছাড়া ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়গামী করার জন্য ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ সহ বেশকয়টি এনজিও সংস্থা কাজ করছে। তবে যথাযথ মনিটারিং ও প্রশিক্ষত জনবলের অভাবে এ ক্ষেত্রে এনজিও গুলোও আশানুরুপ ফলাফল দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে ঝরে পড়ারবিষয়টি আমাকে ভীষণ পীড়া দেয়।

তাই ঝরে পড়াশিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রধান কারন গুলো আমি নোট করারচেষ্টা করছি আমার পর্যাবেক্ষণে ঝরে পড়ার প্রকৃতকারণগুলো নিম্নরুপ-

১. অভিভাবকের সচেতনতার অভাব।
২. অতি দারিদ্র্য।
৩. শিশুবান্ধব ক্লাসরুম ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব।
৪. বাল্যবিয়ে
৫. পরীক্ষাভীতি

ঝরে পড়ার টুকটাক আরো অনেক কারণ আছে। তবে উপরোক্ত কারন গুলোই প্রধান বলে ধরা পড়েছে আমার ক্ষুদ্রপর্যবেক্ষণে।

বিশেষ করে দরিদ্র্যতার কারণে লেখাপড়া ছেড়েদিয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাজ্যামিতিকহারে বাড়ছে। এটা যেন প্রতিরোধকরা যাচ্ছে না। পিতার অসুস্থতা বা মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অভাবে শিশুরা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অর্থোপার্জনের ধান্দায়ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।কেউ কেউ নাম লেখায় টোকাইয়ের তালিকায়।

আবার কেউ কেউ স্বল্প বেতনে যোগদেয় বিভিন্নবাসাবাড়ি,কলকারখানা ও বেসরকারি  প্রতিষ্ঠানের চাকরীতে। কেউ কেউ হয়
বিপদগামী। অনেকে আবার যোগদেয় বিভিন্ন যানবাহনের হেলপার-কন্ডাক্টর হিসেবে।বলতে দিধা নেই যে,মাসিক ১০০ টাকা হারে
উপবৃত্তি দিয়ে অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের  বিদ্যালয়ে ধরে রাখা অসম্ভব।বর্তমানে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছেলে শিক্ষার্থদের চেযে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ করা যায়।এর অর্থ কি দিনদিন ছেলে সন্তানের জন্মহার কমে যাচ্ছে।নাকি অভাবের তাড়নায় ছেলে শির্থীরা বিভিন্ন শিশুশ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে বলেইএহেন অবস্থার সৃষ্টি? ভাবতে হবে খুঁজে বের করতে হবে এর প্রকৃত কারণ।

কথায় বলে-‘অভাবে স্বাভাব নষ্ট’ ক্ষুৎপিপাসায়  কাতরশিশুদের স্কুলে ধরে রাখার কল্পনা তো’ আকাশ কুসুম;কল্পনা বৈ কিছুই নয়।

এ জন্য ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে ঢালাওভাবে উপবৃত্তি প্রদানের পরিবর্তে বিদ্যালয়ভিত্তিক তালিকা করে অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের চাহিদা মাফিক বৃত্তির ব্যবস্থাকরা একান্ত আবশ্যক।এতে করে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতেপারে বলে বিশ্বাস।

এর পাশাপাশি অসচেতন অভিভাবকের লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝানো এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিরলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন খুবই প্রাসঙ্গিক।অধিকজন্মহার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পাশাপাশি বিদ্যালয় গুলোতে শিশুবান্ধব ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা ও শিশুদের
মধ্যকার পরীক্ষাভীতি দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে  ৮ম শ্রেণিতে উন্নীতকরন ও ৫ম শ্রেণির  চলমান সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়েদিতে হবে।

ফলে শিক্ষার্থীদের দূর হবে প্রচন্ড স্নায়ুচাপ সৃষ্টিকরা পরীক্ষাভীতি।সন্দেহ নেই যে,লেখাপড়া সমাপ্তির আগেই ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পথে প্রধান বাধা।

আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ওশিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ সত্যটি  যত দ্রুত  উপলব্ধি করতে পারবেন ততই মঙ্গল।

লেখকঃ মোঃ সুজাউদ্দৌলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জলঢাকা,নীলফামারী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি এরশাদ আলম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.