প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী’র ড্রাইভার র‌্যাবের হাতে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জামালপুর র‌্যাব-১৪ অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি’র মাইক্রো চালক রফিকুল ইসলাম।

র‌্যাব ক্রেতা সেজে রফিকুলকে ৬০০ পিচ ইয়াবাসহ হাতে নাতে গ্রেপ্তর করে মাদক মামলায় রৌমারী থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে।

মন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভার মাদক ব্যসায় জড়িত থাকার ঘটনা ফাঁস হওয়ায় রৌমারীতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

নড়ে চড়ে বসেছে পুলিশ বিভাগ। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাঠে নেমেছে একটি চক্র। অজানা ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

জামালপুর র‌্যাব-১৪ সিপিসি-১ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার এএসপি এম এম সবুজ রানা জানান, তিনি ও সহকারি পরিচালক আনোয়ার হোসেনের যৌথ নেতৃত্বে রৌমারীতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। আমরা গোপন সংবাদে জানতে পারি বোয়ালমারী গ্রামের মৃত বাবুর উদ্দিনের পুত্র ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

র‌্যাব সদস্য ক্রেতা সেজে গত সোমবার বিকাল থেকে জন্তিরকান্দা এলাকায় ফাঁদ পাতে। সন্ধ্যার পর রৌমারী হতে দেওয়াগঞ্জ সড়কের মেসার্স রুনা মটরস এন্ড অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এর সামনে রফিকুল মাদকের চালান ডেলিভারী দিতে আসলে র‌্যাব ৬০০পিচ ইয়াবাসহ তাকে হাতেনাতে আটক করে।

জব্দ করা হয় রফিকুলের ব্যবহৃত মোবাইল সেট। র‌্যাবের এস.আই কামাল হোসেন বাদী হয়ে রৌমারী থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করে পুলিশের হাতে আসামীকে সোপর্দ করে।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই জিয়াউর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি মহোদয়ের ‘হাইরাইজ মাইক্রোবাস’ চালাত ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম। এখন এই গাড়িটির দেখভাল করেন প্রতিমন্ত্রীর চাচাত ভাই আক্তারুজ্জান বাবু। এই মাক্রোবাসটি প্রায়ই মন্ত্রীর কথা বলে ড্রাইভার থানায় রেখে যেতো। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলাম রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের মৃত বাবুর উদ্দিনের ছেলে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি’র চাচাত ভাই আক্তারুজ্জামান বাবু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মাইক্রোবাসটির মালিক মন্ত্রী মহোদয়। আমি রৌমারীতে ভাইয়ের হয়ে ব্যবসা ও গাড়িটির দেখভালের দায়িত্ব পালন করি। আর নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়িটি রাখা হয় রৌমারী থানায়।

ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম আগে থেকে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই। তবে সে এই গাড়িটি নিয়মিত চালাত। ভাইয়ের বিভিন্ন মালামাল ঢাকায় আনা নেয়া করত। রৌমারীতে বিভিন্ন সরকারি ও মানব সেবার কাজে মাইক্রোবাসটি ব্যবহৃত হতো।

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মো. দিলওয়ার হাসান ইনাম রাতে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে র‌্যাব-১৪ এর উপ-পরিদর্শক(এসআই) কামাল হোসেন বাদী হয়ে ১৯১৮সালের মাদক দ্রব্যনিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং ১৪। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জিয়াউর রহমান।

তিনি স্বীকার করেন গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল আগে মন্ত্রীর গাড়ি চালাত। এখন চালান কি না তা তিনি জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার আসামীকে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল আদালতের মাধ্যমে রফিকুলকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, মন্ত্রীর এই ড্রাইভার গাড়ি এবং ৬হাজার ২০০পিচ ইয়াবাসহ আটক হয়। পরে উচ্চ পর্যায়ের তদবিরে গাড়ি ছাড়িয়ে নেয়া হয়। একই সাথে মাদকের পরিমাণও কমে যায়। এ গাড়িটি প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০বার ঢাকায় আপ-ডাউন করে।

গাড়িতে জাতীয় সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো থাকায় বরাবরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যেতো। আর গাড়ির গ্যারেজ ছিল রৌমারী থানা। মন্ত্রীর এ ড্রাইভারের সব অপকর্মের ঘটনা সবাই জানে, ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না। তাদের দাবি র‌্যাব ছাড়া থানা পুলিশ তাকে আটক করতে পারতো না।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের এএসপি এম এম সবুজ রানা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, কে কী বললো তা জানি না। আমরা মামলায় যা উল্লেখ করেছি তাই প্রকৃত ঘটনা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি’র মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও কেউ রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.