প্রমত্তা পদ্মায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবারও ভাঙ্গন শুরু, নদীগর্ভে প্রায় ২’শ মিটার এলাকা, হুমকীর মুখে তীর রক্ষা বাঁধ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ অংশে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির সময় এবং উজানের ঢলে আগষ্টের শেষ ১৫দিনের মধ্যেই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম, বিভিন্ন পাকা স্থাপনা ও কয়েক শত বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। সেই সঙ্গে পাউবোর চলমান নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দুই নম্বর গ্রুপের একজন ঠিকাদারের ২৬ হাজার ৬০০ সিসি বøক নদীতে চলে গেছে। আগষ্ট মাসের শেষ দিকে ভাঙ্গনের তীব্রতা কমলেও আবারও শুরু হয়েছে ভাঙ্গন।
গত শুক্রবার, শনিবার ও আজ রোববার ভাঙ্গনের তীব্রতায় নতুন করে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা। যা এখনও অব্যাহত আছে। ভাঙনকবলিত ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাউবোর কর্মকর্তারা জরুরি কাজগুলো করাতে সময়ক্ষেপণ করেছে।
গত শুক্রবার নতুন করে ভাঙন শুরু হলে পাউবো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করলেও কোন কাজ হয়নি। এরই মধ্যে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের অবহেলায় ভাঙন উপদ্রুত এলাকায় বালুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে প্রভাবশালী একটি বালু সিন্ডিকেট।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরবাগডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বিটিসি নিউজকে জানান, গত শুক্রবার থেকে সাত নম্বর স্পারের ভাটিতে কিছু অংশে আকস্মিকভাবে নদীভাঙন শুরু হয়।
আজ রোববারের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় গোয়ালডুবি গ্রামের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা। আতঙ্কিত এলাকাবাসী বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান এই সচেতন ব্যক্তি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাখর আলী ঘাটের কয়েক’শ গজ ভাটিতে পদ্মায় একটি প্রবল ঘূর্ণিতে ভাঙ্গন তীব্রতর হয়েছে। এসময় আমবাগান, বাঁশ বাগানসহ বিভিন্ন ফসলি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে গত তিনদিনের মধ্যে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীতে চলে যায়। দেখতে দেখতেই নদীতে বিলীন হতে শুরু করে আম বাগান, কলা বাগান ও ফসলের ক্ষেত। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখলেও তাঁরা নির্বাক।
এদিকে, পদ্মার বিধ্বংসী এই ভাঙনে বাখের আলী ও চরবাগডাঙ্গা বিজিবি আউটপোস্ট, চারটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, বাগডাঙ্গা ইউপি কমপ্লেক্স, বেড়িবাঁধ পাকা সড়ক, তিন শতাধিক আমবাগান, ১১টি গ্রাম, তিনটি বাজার এবং পাকা সড়কের পশ্চিমে সাড়ে চার হাজার বসতভিটা ভাঙনের কয়েকশ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। নদীর আরও নিকটবর্তী তিনটি গ্রামের লোকজন দিনভর বাড়িঘর সরাতে ব্যস্ত রয়েছে।
পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা বিটিসি নিউজকে জানান, উজানে আলিমনগর থেকে চরবাগডাঙ্গা বিজিবি ফাঁড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে তিন কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছে। কয়েক বছর আগে পদ্মার বামতীর রক্ষাবাঁধ নির্মিত হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। গড়ে তুলেছে বিঘার বিঘা আমবাগান। কিন্তু এখন এসবের অধিকাংশ পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলো যেকোন মুহুর্তে বিলীন হবার অপেক্ষায়। চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করায় নাই।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ময়েজ বিটিসি নিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই রবিবার সকাল থেকে পদ্মার চরবাগডাঙ্গা গোয়ালডুবি এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন তিব্র হচ্ছে। একটি ঘুরনিপাক হয়ে পানি ঘুরছে এবং পাড় কেটে যাচ্ছে। তিনি জানান, সকাল থেকে পদ্মা বাম তীর সংরক্ষন প্রকল্পের সিসি বøক দিয়ে বাঁধানো এলাকারও কিছু অংশ নদীতে চলে গেছে। চরম হুমকীর মুখে রয়েছে পুরাতন বাঁধ। এছাড়া রবিবারের ভাঙ্গনে এলাকার প্রায় ৫০ মিটার দৈর্ঘের এবং অনেক চওড়া হয়ে ভাংছে। ফলে সবমিলিয়ে পদ্মা তীরের অবস্থা খুব ভালো নয়, আস্তে আস্তে লোকালয়ের কাছে চলে যাচ্ছে পদ্মা। জিও ব্যাগ ফেলেও কোন উপকারে আসছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভাঙ্গন রোধে।
উল্লেখ্য, পদ্মার তীর সংরক্ষণে ৫৬৬ কোটি টাকার সম্প্রসারিত প্রকল্পের ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয় জানুয়ারিতে। প্রায় ২৭ গ্রুপের কাজের অধিকাংশই গত সাত মাসেও শুরু হয়নি। কয়েকজন ঠিকাদার শুধু সিসি বøক তৈরি করে জমা করছিলেন।
এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকৌশলী বিটিসি নিউজকে বলেন, আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ আছে। তারা বন্যা শেষে কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ভাঙন এভাবে বিধ্বংসী হয়ে উঠবে ধারণা করতে পারেননি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.