প্রধানমন্ত্রী সংলাপের একটা কথাও রাখেননি : মির্জা ফখরুল

 

ঢাকা প্রতিনিধিআজ শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিষয়গুলোর আশ্বাস দিয়েছিলেন তার একটিও রাখেননি তিনি ।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে ডাক দিয়েছেন সেটাকে মানুষ তো মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ আমাদের সঙ্গে যে সংলাপ হলো তখন তিনি যে কথাগুলো দিয়েছিলেন, সেই কথাও তিনি রাখতে পেরেছেন? একটাও রাখতে পারেননি অর্থাৎ রাখেননি।

তিনি বলেছেন, গ্রেপ্তার হবে না, নতুন কোনো মামলা হবে না এবং একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে- একটাও রাখেননি।

তিনি আরও বলেন, আজকে যে কথাগুলো (জাতীয় ঐক্য, সংসদে যাওয়া) তিনি বলছেন, এগুলো কথার কথা, এগুলো তিনি সব সময় বলেন। আমরা তো ফলাফলই প্রত্যাখ্যান করেছি, সেখানে নতুন করে শপথ নেওয়া ও পার্লামেন্টে যাওয়া- এই বিষয়ের তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ে সরকার গঠনের পর গতকাল শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণে বিভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর ওই ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য আমি শুনেছি। প্রথমে সেটা মনে হয়েছে যে, তিনি একটা গিল্টি কনসেস থেকে বক্তব্যটা রেখেছেন।  কেন জানি না মনে হয়েছে, তার কোথাও একটা মনে হচ্ছে, বিষয়টা ঠিক হয়নি। একটা ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। সেই ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন- কেন বিএনপি ভালো করতে পারলো না, কেন তারা (আওয়ামী লীগ) এত ভালো করলো। যেটা তার চিন্তাভাবনা থেকেই বলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভয়ে প্রকৃত ঘটনায় কেউ যেতে চাচ্ছে না। মিডিয়াও বলছেন না, অন্যান্যরাও সহজে বলতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে মিডিয়া, পলিটিক্যাল এরেনা, বিভিন্ন দেশগুলো থেকে যে সমস্ত বক্তব্য এসেছে, যে সমস্ত রিপোর্ট এসেছে তাতে করে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই নির্বাচন কোনো নির্বাচনই হয়নি। এটা একটা কঠিন তামাশা হয়েছে জাতির সঙ্গে। যে কথাটা আমি বার বার বলছি, জাতির সঙ্গে ক্রুয়েল মকারি।

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এ নির্বাচন দীর্ঘস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের একটা বড় রকমের ক্ষতি করে দিয়েছে। এই নির্বাচনের ফলে নির্বাচন প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা চলে গেল, এই নির্বাচনের ফলে নির্বাচন কমিশনের পরে আস্থা চলে গেল, এই নির্বাচনের ফলে রাষ্ট্রের ওপরে আস্থা চলে যাচ্ছে এজন্যে যে, রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল, বিভিন্ন এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বক্তব্যে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে ফিরিস্তিগুলো দিয়েছেন, তার ইশতেহারের ফিরিস্তি, উনার কাজের ফিরিস্তি- এখানে তো বিরাট রকমের গরমিল রয়েছে। এই যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, এটা পুরোপুরি তো ধোঁকার উন্নয়ন। কিছু মানুষ বড়লোক হচ্ছে, ধনী হচ্ছেন। পত্রিকায় রিপোর্টও এসেছে যে, বাংলাদেশের ধনীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। আর গরীব আরও গরীব হচ্ছে।

প্রত্যেকটি দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিচে চলে যাচ্ছে। আপনার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, বিনিয়োগের কোনো নিরাপত্তা নেই এবং ব্যাংকে যারা টাকা রাখছেন তার পর্যন্ত দেখছেন ব্যাংক থেকেও টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্নভাবে। দুর্নীতি এমনভাবে বেড়েছে যেন সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্নও করতে পারে না। পুরোপুরি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে এবং সেটা করার জন্য এই সমস্ত আয়োজন করা হচ্ছে, সেজন্য নির্বাচনটা এভাবে করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.